মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি স্থগিত: পাঠক প্রতিক্রিয়া

দেশে এখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখের বেশি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে অনলাইনে ও সরাসরি আরও দেড় লাখ আবেদন জমা পড়ে। তাঁদের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে প্রায় ২৫ হাজার নাম পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় হাজার পাঁচেক ব্যক্তির নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ মেনে নিয়েই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে সরকার। দেশের জেলা-উপজেলা থেকে যাচাই-বাছাই কমিটি যেসব তালিকা পাঠিয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ হওয়ায় গতকাল রোববার আকস্মিক এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ফেসবুকে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। অনেক পাঠক সেখানে তাঁদের মূল্যবান পরামর্শ ও মতামত জানিয়েছেন।

আরিফ ফকির মনে করেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ দলিল। আর এই দলিলে যদি অনিয়ম হয়, মিথ্যা তথ্য থাকে, তাহলে সত্য বলে কোনো দলিল থাকবে না বাংলাদেশে।’

হিমু চন্দ্র শীল লিখেছেন, ‘খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে অনেক বছর আগে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় স্থান পাওয়ার জন্য মানুষের লাইন দিন দিন বেড়েই চলছে।’ একে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সঙ্গে প্রতারণা মনে করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান তালিকা ত্রুটিমুক্ত নয় বলে মনে করেন রূপম ভৌমিক। তিনি লিখেছেন, ‘তালিকার ভেতরে অনেক নকল মুক্তিযোদ্ধা সুবিধা ভোগ করে আসছে। অপর দিকে প্রকৃত অনেক মুক্তিযোদ্ধাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা পাচ্ছেন না।’

রূপম ভৌমিকের পরামর্শ—নতুনভাবে তালিকা তৈরি করা হোক। যাঁরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা অথচ তালিকায় নেই, তাঁদের অন্তত তালিকায় যোগ করা হোক। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার নানা পর্যায়ের দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করেন এস এম জুবায়ের। তাঁর অভিযোগ, ‘এর আগে যখন বয়স বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন সচিব পদমর্যাদার ব্যক্তি পর্যন্ত সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছিলেন। তাহলে তৃণমূলে কী হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য!’

আহাদুল হক সোহাগ লিখেছেন, ‘তালিকা তৈরি না করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করুন। তাতে অন্তত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মায় কিছুটা শান্তি আসবে।’

তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মো. সুরুজ্জামান শামিমসহ অনেকেই।

নাজনীন চৌধুরী লিখেছেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কী হবে? যাঁরা আজও তালিকাভুক্ত হননি, যাঁদের চোখের পানিতে বুক ভিজে যায়? অর্থবিত্ত আর পরিচিতির অভাবে কেউ তাঁদের মনেই রাখেনি। অথচ ভুয়াদের ছড়াছড়িতে দেশ আজ উড়ছে।’

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় দলীয়করণ হয় অভিযোগ করে রাসুল আহমেদ লিখেছেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীরা যখন মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠান, ঘুষ দিয়ে তদবির করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তখন আসলে এ দেশটা নিয়ে হতাশার জায়গাটা কখনো আশায় পরিণত হয় না।’

তালিকায় অনিয়মের জন্য সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের দুষছেন আবদুল জলিল। তিনি লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের জন্য সরকারদলীয় নেতারাই দায়ী। দলগত ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়ে যাচ্ছেন। সরকারের উচিত দলীয় চিন্তা বাদ দিয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া, যাতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি হয়।

তালিকার কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ভালো হয়নি—এমন মতও প্রকাশ করেছেন অনেক পাঠক। মুসফিক মিলন লিখেছেন, ‘অনিয়ম হলে প্রতিকার করা উচিত। কিন্তু স্থগিত করাটা কোনো সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ নয়। বিষয়টা সুরাহা না করে ঝুলিয়ে রাখা হলো।’

জয়া জান্নাহ কিছুটা বিদ্রূপ করে লিখেছেন, ‘অনিয়ম থেকে বাঙালি জাতির বীরত্বও রেহাই পেল না। এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়!’