পাকড়া মাছরাঙা

জোড়া পাকড়া মাছরাঙা। রাজশাহীতে পদ্মার চরে।  ছবি: আদনান আজাদ
জোড়া পাকড়া মাছরাঙা। রাজশাহীতে পদ্মার চরে। ছবি: আদনান আজাদ

ওরা যেন মুখোমুখি হয়ে শূন্যে নৃত্য করছে অপরূপ সুন্দর দৃশ্য রচনা করে। শান্ত জলে ওদের ছায়া নাচছে। ধ্যান-জ্ঞান এখন মাছ, মোক্ষম সুযোগ এলেই উপুড় হয়ে ডাইভ মারবে তিরগতিতে, লম্বা-চোখা ঠোঁটের ফাঁকে চেপে ধরবে শিকার।

একটি পাখি চোখের পলকে ডাইভ মারল, টর্পেডোর মতো জলের তলায় চলেও গেল, উঠল ঠোঁটের ফাঁকে একটি ছোট শোলমাছ নিয়ে। মাছটি তড়পাচ্ছে, পাখিটিও হোভারিং করতে করতে ঘাড়-মাথায় ঝাঁকুনি তুলে মাছটিকে মেরে গিলে ফেলল। তারপরে টুপ করে জলে ঠোঁট চুবিয়ে জল পান করে আবার সঙ্গীর পাশে গিয়ে শুরু করল হোভারিং। একটু ডানে-বাঁয়ে বা সামনে সরছে বটে পাখি দুটি, কিন্তু চোখ পানির দিকেই।

এদের প্রধান খাদ্য মাছ। তবে জলসাপের বাচ্চা, কুঁচের বাচ্চা, ব্যাঙাচি, কাঁকড়ার বাচ্চাসহ নানান রকম জলজ পোকামাকড়ও খায়। বাসায় ডিম না থাকলে পুরুষ ও মেয়ে পাখি জোড়ায় জোড়ায় চলে, কেউ কাউকে রেখে দূরে যায় না। পালা করেই ডিমে তা দেয় এরা, পালা করেই ছানাদের খাওয়ায়। ডিম পাড়ে পাঁচ-ছয়টি, সাতটিও দেখা যায় ক্বচিৎ। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৯-২২ দিনে। একনজরে পাখিটি সুন্দর সাদা-কালো রঙে চিত্রিত, উড়লে যেন ওদের শরীর থেকে সাদা-কালো দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে, শরীরে রোদের আলো পড়লে ওই সাদা-কালো ও সাদা সাদা ছিট যেন ঝলকায়।

পাখিটির নাম পাকড়া মাছরাঙা। ডোরাকাটা মাছরাঙাসহ আরও কয়েকটি স্থানীয় নাম আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। ফকিরহাট-বাগেরহাটে এটি ‘ছিটে মাছরাঙা’ নামে পরিচিত। চোখের ওপর দিয়ে সাদা রেখা মাথার পেছন পর্যন্ত বয়ে গেছে, চোখে যেন কাজল লেপ্টানো, ঘাড়-গলা-বুক-পেট ও ডানার তলদেশ কার্পাস তুলার মতো সাদা। ওড়ার পালকের প্রান্ত কালো। বুক, পেটের দুপাশ ও নিচের লেজের একটু ওপরে কালো ছোপ আছে। মাথার পেছন দিকে সাদা-কালো রঙের ছোট ঝুঁটি আছে। উত্তেজিত হলে বা বুকে প্রেম জাগলে ওই ঝুঁটি জেগে ওঠে। ঠোঁট ও পা স্লেটের মতো কালো।

অন্যান্য মাছরাঙার বাসার বৈশিষ্ট্য একটু ভিন্ন। তিন-চার ফুট গভীর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে আচমকা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আরও ফুটখানেক গর্ত খুঁড়ে তারপরে ডানে-বাঁয়ে আরও এগিয়ে তৈরি করে ডিম-ছানার চেম্বার। খুঁজে পেলে বিষধর সাপের খোলসের অংশবিশেষ ঝুলে থাকতে দেখা যায় বাসার প্রবেশমুখে। চোখা ঠোঁট দিয়ে সুড়ঙ্গের মুখে সাপের খোলসের এক পাশ পুঁতে দেয়। এটা শত্রুদের ভয় দেখানোর জন্য অভিনব কৌশলই বটে! এদের ইংরেজি নাম Pied Kingfisher। বৈজ্ঞানিক নাম Ceryle rudius। দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি। ওজন ৬৮-১১০ গ্রাম।