সামারাকে রেখে চলে গেলেন সালমা

বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের যাত্রী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা উম্মে সালমা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের যাত্রী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা উম্মে সালমা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

মেয়েকে সব সময় চোখে চোখে রাখতেন সালমা। অফিসে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে যেতেন। অফিসের ডে কেয়ার সেন্টারে রাখতেন। অফিস শেষে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। মাকে ছাড়াই এখন বড় হতে হবে শিশুটিকে। সালমার আড়াই বছর বয়সী শিশুকন্যা সামারা আজ সারা দিন ধরে কাঁদছে বলে জানালেন সালমার বড় ভাই আনোয়ার সাদাত।

গতকাল সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের যাত্রী ছিলেন সালমা। তিনি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশনের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ। দুই দিনের অফিসের কাজে সোমবার দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী নাজিয়া আফরিন। দুজনের কেউই এখন বেঁচে নেই।

সালমার বড় ভাই আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে রাজধানীর দক্ষিণ খানের হেলান রোডের বাড়িতে কথা হয় আজ মঙ্গলবার দুপুরে। ছায়া ঢাকা নিরিবিলি বাড়িটিতে শোকের ছায়া স্পষ্ট। আনোয়ার সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে আমাদের বাড়িতে ফোন করে বলেছিল, “আমি সকালে জিও লেটার পেয়েছি। এখন নেপাল যাচ্ছি।” এটাই ছিল সালমার শেষ কথা।’

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আনোয়ার সাদাত যেন আপনমনেই বলে উঠলেন, ‘জিও লেটার একটু পরে পেলে সালমা হয়তো বেঁচে যেতে। দুদিনের জন্য নেপাল যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন রোববারও ওর জিও লেটার আসেনি। গতকাল সকালে অফিসে যাওয়ার পরই সালমার হাতে জিও লেটারটি আসে।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে সবাইকে নিয়ে বেশ হৈহুল্লড় করেছিলেন সালমা। তবে মেয়েকে সব সময় আগলে রাখতেন। অফিসে ডে কেয়ার সেন্টারে রেখে কাজ করতেন। অফিস শেষে আবার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন।

আনোয়ার সাদাত জানান, তাঁর বাবা রায়হান আলী মিয়া ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী। বাবার অবসরের পর হেলান রোডে চলে আসেন তাঁরা। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে সালমা সবার ছোট। সালমা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন হলিক্রস কলেজ থেকে। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যোগ দেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে। পরে বিসিএস পাস করে সালমা পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গেƼবিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের সংসারে রয়েছে সামারা নামে আড়াই বছরের এক মেয়ে। এই মেয়েকে নিয়ে এখন সালমার পরিবারের চিন্তা।
আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘মেয়ে সামারাকে একা রেখে চলে গেল সালমা। আজ সকাল থেকে মেয়ে শুধুই কাঁদছে। কেন কাঁদছে বুঝতে পারছি না। মাকে হারানোর মতো জ্ঞানবুদ্ধি তো ওর নেই। সামারাকে রেখে ওর বাবা মাসুদ আমার আরেক ভাইকে নিয়ে সকালে নেপাল গেছে। এখন মেয়েটিকেই আগলে রাখব আমরা সবাই।’