টেলিভিশন ক্যামেরাপারসনকে নির্যাতন, ডিবির ৮ সদস্য প্রত্যাহার

বরিশালে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসনকে অমানবিক নির্যাতনের পর আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের চকবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটনায় সুমন হাসান নামে ওই গণমাধ্যমকর্মীকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আটক রাখা হয়। এরপর স্থানীয় সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে বিকেলে তাঁকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বরিশাল নগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি) নাছির উদ্দিন মল্লিক জানান, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আট পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন উপপরিদর্শক ও দুজন সহকারী উপপরিদর্শক ও পাঁচজন কনস্টেবল রয়েছেন। তাদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।

ওই চ্যানেলের স্থানীয় সাংবাদিক অপূর্ব অপু জানান, মঙ্গলবার দুপুরে শহরের পুরাতন বিউটি সিনেমা হলের সামনে থেকে জাহিদুল ইসলাম নামে এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করে ডিবি পুলিশ। ওই মাদক বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসির ক্যামেরাপারসন সুমন হাসানের ভাইয়ের ছেলে আরিফ হোসেনের নাম প্রকাশ করেন।

বিষয়টি জানতে পেরে সুমন হাসান সেখানে গিয়ে ডিবি পুলিশের উপস্থিতে কেন তার ভাইয়ের ছেলের নাম বলা হচ্ছে জানতে চান আটক জাহিদের কাছে। এতে অভিযান পরিচালনাকারী ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশারের নেতৃত্বে সুমন হাসানকে আটক করা হয়। একপর্যায়ে তাকে সেখানে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। এরপর ডিবি পুলিশ সদস্যরা সুমন হাসানকে জোর করে গাড়িতে তুলে নগরের পলিটেকনিক সড়কের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান।

সুমন হাসানের অভিযোগ, গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় এবং ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাঁকে লাথি, থাপ্পড় এবং স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করাসহ অমানবিক নির্যাতন করা হয়।
তবে ডিবির ওই দলের সদস্যদের দাবি, তাঁরা সুমন হাসানকে মারধর করেননি। ডিবি পুলিশের কাছে আটক জাহিদের ওপর সুমন হামলা করলে তারা (ডিবি) সুমনকে থামাতে গেলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে মাত্র।

সুমনের ওপর নির্যাতনের খবর পেয়ে বরিশালের কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ডিবি কার্যালয়ে ছুটে যান। সেখানে নগর উপ পুলিশ কমিশনার (ডিবি) উত্তম কুমার পাল ও উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফের উপস্থিতিতে সাংবাদিকেরা এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।

এরপর বিকেল ৪টার দিকে সুমন হাসানকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছেড়ে দেয় এবং ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে সুমন হাসানকে সহকর্মীরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি। সংগঠনটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মাসুক কামাল রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনায় নিন্দা জানার এবং তদন্ত পূর্বক অবিলম্বে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি জানান।