'বিমানটা নামল দেখলাম, আগুন ধরল তা-ও দেখলাম'

নিহতদের নাম লেখা প্লাকার্ড নিয়ে মর্গের সামনে স্বজনেরা। ১৪ মার্চ, ২০১৮, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতাল। ছবি: কামরুল হাসান।
নিহতদের নাম লেখা প্লাকার্ড নিয়ে মর্গের সামনে স্বজনেরা। ১৪ মার্চ, ২০১৮, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতাল। ছবি: কামরুল হাসান।

ভয়াবহ ওই ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেছে। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার পর তীব্র কষ্ট নিয়ে এখন প্রিয়জনের লাশটি পাওয়ার অপেক্ষায় স্বজনেরা। গত সোমবার নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ (বিএস ২১১) বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৫০ জনের মরদেহ রাখা হয়েছে কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতালের মর্গের হিমঘরে। ওই মর্গের সামনে আজ বুধবারও প্রিয়জনের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড বুকে বেঁধে দাঁড়িয়ে স্বজনেরা।

ইউএস-বাংলার ওই ফ্লাইটের কো পাইলট পৃথুলা রশীদের বৃদ্ধ নানা এম এ মান্নান অপেক্ষায় আছেন মর্গের সামনে। বললেন, ‘আমি জানি না কবে লাশ পাব।’

কো পাইলট পৃথুলা রশীদের নানা এম এ মান্নান অপেক্ষায় আছেন মর্গের সামনে। ১৪ মার্চ, ২০১৮, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতাল। ছবি: কামরুল হাসান।
কো পাইলট পৃথুলা রশীদের নানা এম এ মান্নান অপেক্ষায় আছেন মর্গের সামনে। ১৪ মার্চ, ২০১৮, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতাল। ছবি: কামরুল হাসান।

এমনই এক স্বজন উর্মিলা প্রধান। তিনি সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রী শ্রেতা থাপার মা। মেয়ের নামের প্ল্যাকার্ড বুকে নিয়ে অবিরাম কাঁদছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘আমি মেয়ের জন্য এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলাম। বিমানটা নামল দেখলাম, বিমানটায় আগুন ধরল তা-ও দেখলাম। জানি না, কবে মেয়েটির লাশ পাব।’

নিহত আলীমুজ্জামানের আত্মীয় ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মরদেহ কবে ফিরে পাব তার কোনো ঠিকঠিকানা নাই। কেউ কিছু বলতে পারছে না।’

সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রী শ্রেতা থাপার মা উর্মিলা প্রধান দাঁড়িয়ে আছেন মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে। ১৪ মার্চ, ২০১৮, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতাল। ছবি: কামরুল হাসান।
সিলেটের রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রী শ্রেতা থাপার মা উর্মিলা প্রধান দাঁড়িয়ে আছেন মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে। ১৪ মার্চ, ২০১৮, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতাল। ছবি: কামরুল হাসান।

ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন বাংলাদেশি, ২৪ জন নেপালি ও একজন চীনা নাগরিক। স্বজনেরা আশঙ্কা করছেন, মরদেহ পেতে অনেক সময় লাগবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ময়নাতদন্ত, রাসায়নিক পরীক্ষা ও ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। কোন দেশের নাগরিক, ছেলে না মেয়ে, তা বোঝার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ছে।

আজ বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাম বাহাদুর থাপা ও সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। তিনি মর্গ পরিদর্শনেও যান। এ সময় হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান প্রমথ শ্রেষ্ঠা মন্ত্রীকে জানান, এই মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত হবে। পরিচয় শনাক্ত করা হবে। তারপর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।