রানওয়ে নির্ধারণে তালগোল

বিধ্বস্ত বিমান থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। কাঠমান্ডু, নেপাল, ১২ মার্চ। টুইটার থেকে নেওয়া ছবি
বিধ্বস্ত বিমান থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। কাঠমান্ডু, নেপাল, ১২ মার্চ। টুইটার থেকে নেওয়া ছবি

• দুর্ঘটনা বিষয়ে ফ্লাইট গ্লোবালের প্রতিবেদন।
• ফ্লাইট গ্লোবাল বিশ্বের ৯০০ এয়ারলাইনসের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে।

বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটির সঙ্গে কাঠমান্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কথোপকথনটি ছিল অস্বাভাবিক। ওই কথোপকথন থেকে বোঝা যাচ্ছে, অবতরণের জন্য আসলে কোন রানওয়ের কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল।

বেসামরিক বিমান চলাচলবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট গ্লোবালের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। ফ্লাইট গ্লোবাল বিশ্বের ৯০০ এয়ারলাইনসের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে। প্রতিষ্ঠানটি উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণের গতিপথ ও যাত্রাপথে কখন, কী অবস্থায় ছিল, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য রাখে।

কাঠমান্ডুতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার ফ্লাইট গ্লোবাল তাদের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, কাঠমান্ডুতে একটি রানওয়ে। উড্ডয়ন ও অবতরণের ক্ষেত্রে রানওয়ের দক্ষিণ প্রান্তের সংকেত জিরো টু (০২)। আর উত্তর প্রান্তের সংকেত টু জিরো (২০)।

ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটিকে প্রথমে রানওয়ে ‘জিরো টু’তে অবতরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু কাঠমান্ডুর এটিসিকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাকে রানওয়ে জিরো টুতে অবতরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনি টু জিরোর দিকে যাচ্ছেন।’

তখন অন্য একজন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটিকে জানান, রানওয়ের টু জিরোতে অবতরণ করা যাবে। মিনিট খানেক পর অপর একটি উড়োজাহাজ অবতরণের জন্য এটিসির কাছে পরামর্শ চায়। তখন এটিসি ইউএস-বাংলার ক্রুদের কাছে জানতে চায় তাঁরা আসলে কোথায় অবতরণ করতে ইচ্ছুক।

এটিসি প্রথমে ডান দিক থেকে রানওয়ের টু জিরোতে এবং পরে ওই নির্দেশনা সংশোধন করে ডান দিক থেকে জিরো টুতে নামার পরামর্শ দেয়। ওই একই সময়ে অন্য উড়োজাহাজটিকেও জিরো টুতে অবতরণের নির্দেশনা দেয় এটিসি।

ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজকে এটিসি যখন সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়, তখন পাইলট বলেন তিনি জিরো টুতে অবতরণ করবেন। ঠিক তার পরপরই এটিসি পাইলটের কাছে জানতে চান, তিনি কি রানওয়ে টু জিরোতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

পাইলট ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। এটিসি তখন পাইলটকে বলেন ডান দিক দিয়ে জিরো টুতে নামতে। এটিসির গলায় তখন ছিল ভীষণ তাড়া। তিনি পাইলটকে সতর্ক করে বলতে থাকেন, অন্য একটি উড়োজাহাজ অবতরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সে সময় অপর উড়োজাহাজটি আবারও অবতরণের অনুমতি চাইলে সেটিকে জিরো টুতে নামার সংকেত দেন এটিসি।

এটিসি আবারও জোর দিয়ে ইউএস-বাংলাকে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, রানওয়ে টু জিরোর দিকে এগোবেন না।’ জবাবে পাইলট বলেন, তিনি ডান দিকে এগোবেন ও জিরো টুতে নামার জন্য অপেক্ষা করবেন।

এসিটি বলেন, ‘ঠিক আছে। কিন্তু অবতরণ করবেন না।’

এক মিনিট পর এটিসি ইউএস-বাংলাকে যেকোনো একটি রানওয়ে বেছে নিতে বলেন। পাইলট টু জিরোতে অবতরণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এটিসি কন্ট্রোলার তখন ইউএস-বাংলাকে টু জিরোতে নামার অনুমতি দেন। জানান, ২৭০ ডিগ্রি থেকে বাতাসের চাপ ৬ নটিক্যাল মাইল। পাইলট জানান, তিনি অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

যখন এটিসি জানতে চান পাইলট রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন কি না। তিনি ‘না’ সূচক জবাব দেন। এটিসি পাইলটকে ডান দিকে ঘুরতে বলেন এবং আবারও জিজ্ঞাসা করেন তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন কি না।

পাইলট জবাব দিয়েই অবতরণের অনুমতি চান। এটিসি প্রথমে রানওয়ের নাম না বলেই নামার অনুমতি দিয়ে দেন।

পাইলট তখন টু জিরোর বদলে জিরো টুতে অবতরণের কথা জানান। জবাবে এটিসি বলেন, ‘রজার, রানওয়ে জিরো টু, অবতরণের জন্য প্রস্তুত।’

ইউএস-বাংলার পাইলট ও কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরের এটিসির মধ্যে কথোপকথনের রেকর্ডটি ‘লাইভঅ্যাক্ট আর্কাইভ’ থেকে পাওয়া।