দপ্তরি নিয়োগে চার কর্মকর্তা যা যা করলেন

নিয়োগ পেয়েছেন একজন, কিন্তু যোগদানের আগেই তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ। অভিযোগ, তিনি সাইকেল চালাতে পারেন না। এরপর লোক দেখানো তদন্ত। নিয়োগের ছয় মাসের মাথায় চাকরি গেল তাঁর। একই দিনে নিয়োগপত্র দেওয়া হলো অন্যজনকে।

এত সব আয়োজন ‘দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী’ নিয়োগ নিয়ে। খুলনার পাইকগাছার হোগলার চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঘটনার শিকার হীরক জ্যোতি মণ্ডল। বাড়ি হোগলার চক গ্রামে।

পাইকগাছা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটারের পথ হোগলার চক। ২ মার্চ সেখানে যান প্রথম আলোর প্রতিবেদক। দুপুরে বিদ্যালয়ের পাশের দোকানে বসে ছিলেন কয়েকজন। প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁরা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে শতাধিক নারী-পুরুষের জটলা। সবাই যেন একই সঙ্গে বলতে চান অনেক কিছু। এলাকাবাসী বলেন, ঘটনার কলকাঠি নেড়েছেন দুজন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফাল্গুনী মণ্ডল ও প্রধান শিক্ষক জাহ্নবী রানী জোদ্দার। তাঁরা সম্পর্কে দেবর-ভাবি। হীরকের জায়গায় নিয়োগ পাওয়া কঙ্কণ থান্দার তাঁদের পছন্দের মানুষ।

বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি পরিতোষ মৃধা বলেন, হীরকের বাবা ছিলেন বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক। মানবিক কারণেই এলাকাবাসী হীরকের পক্ষে।

হীরক নিয়োগপত্র পান গত বছরের ১৩ আগস্ট। ১৬ আগস্ট কর্মস্থলে যোগ দেন। কিন্তু ৮ আগস্ট ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়, হীরক সাইকেল চালাতে পারেন না এবং রাতে বিদ্যালয়ে থাকতে চান না। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন হীরক। তিনি সাইকেল চালিয়ে দেখালেন।

হীরক চাকরি থেকে অব্যাহতি পান ১৩ ফেব্রুয়ারি। তাঁর অভিযোগ, ওই দিন তাঁকে স্কুলে আটকে রাখা হয়। প্রধান শিক্ষক, সভাপতিসহ তিনজন তাঁকে মারধর করে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর নেন। তবে সভাপতি ফাল্গুনী মণ্ডল সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, হীরক স্বেচ্ছায় অব্যাহতিপত্রে সই করেছেন।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগটি তদন্ত করেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঝংকর ঢালী। তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, তদন্তকালে হীরক সাইকেল চালিয়ে দেখাতে পারেননি। তারপর রাতে বিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাননি। বিদ্যালয় এলাকায় চারজন ছিলেন। তাঁরা সাক্ষ্য দেন, হীরক রাতে থাকেন না। তবে চার সাক্ষীর একজন স্থানীয় অনিল কৃষ্ণ থান্দার বলেন, হীরক রাতে বিদ্যালয়ে থাকেন; এ কথাই তিনি তদন্তকারীকে বলেছিলেন।

বিএনপি-জামায়াত আখ্যা?
১৩ ফেব্রুয়ারি কঙ্কণ থান্দারকে নিয়োগপত্র দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে এলাকাবাসীর বাধায় কাজে যোগ দিতে পারেননি। এমন অবস্থায় ঝংকর ঢালী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে যান। তাঁকে অবরুদ্ধ করেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে পাইকগাছার ইউএনও ফকরুল হাসান ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রামবাসীকে ডাকেন।

কয়েক শ মানুষ ইউএনওর কার্যালয়ে যান। তাঁদের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, সেখানে হীরককে বিএনপি-জামায়াত ও সন্ত্রাসী আখ্যা দেন ইউএনও। প্রায় সবার সঙ্গেই কমবেশি দুর্ব্যবহার করেন তিনি। সবাইকে মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকিও দেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও ফকরুল হাসান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাক্ষাৎকারের সময় হীরক দাবি করেছিলেন, তিনি সাইকেল চালাতে পারেন। কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি সাইকেল চালাতে পারেন না।

কঙ্কণ থান্দার ১৯ ফেব্রুয়ারির আগে কাজে যোগ দিতে পারেননি। ওই দিন ইউএনও ফকরুল বিদ্যালয়ে যান। কঙ্কণকে পদে বসিয়ে আসেন।