মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের করিডরে একটি ছবি এঁকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের প্রস্তুতির কাজ উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। ছবি: সাইফুল ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের করিডরে একটি ছবি এঁকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের প্রস্তুতির কাজ উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বাংলা নববর্ষ আসতে প্রায় মাস খানেক সময় বাকি। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে নতুন বাংলা বছর ১৪২৫ বঙ্গাব্দ বরণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতি।

ফকির লালন সাঁইয়ের ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’—প্রাথমিকভাবে এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বরাবরের মতো যার খরচ বহন করতে চারুকলা অনুষদের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে থাকছে চিত্রকর্ম, সরাচিত্র তৈরি ও বিক্রির কার্যক্রম। এ বছর অনুষদের ২০তম (সম্মান) ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও চারুশিল্পীরাও যোগ দেবেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকঢোলের বাদ্যির মধ্য দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বের উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। চারুকলা অনুষদের করিডরে সাদা ক্যানভাসে রংতুলির ছোঁয়ার মধ্যে দিয়ে তিনি এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন পর্বে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সময় উপস্থিত ছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, সাবেক ডিন অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক্ আলভী, অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ আফজাল, শিশির ভট্টাচার্য্য, বিশ্বজিৎ গোস্বামী প্রমুখ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় মুড়িমুড়কি-খই-বাতাসা দিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয় সবাইকে। শিগগিরই এখানে সরাচিত্র আঁকতে শুরু করবেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছবি এঁকে উদ্বোধন করে রফিকুন নবী বলেন, ‘বৈশাখ উদ্‌যাপনে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাটি কালে কালে অনেক বছর হয়ে গেল। দিন দিন এই আয়োজনের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও বাড়ছে। আমরা শুরু থেকেই এর সঙ্গে আছি। ছাত্র-শিক্ষক মিলে পুরো আয়োজনটিকে বর্ণাঢ্য করে তোলে। সবারই চেষ্টা থাকে শোভাযাত্রাটিকে কত রঙিন করে তোলা যায়। আর এই শোভাযাত্রার অনুপ্রেরণা হিসেবে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে প্রাধান্য দিই। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।’
চারুকলা অনুষদের ডিন ও জাতীয় বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে লালন সাঁইয়ের ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি...’ এ বাণীকে শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে সোনার মতো খাঁটি মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ শোভাযাত্রার মধ্য সেই খাঁটি মানুষকেই খুঁজব। তিনি আরও জানান, এবারের শোভাযাত্রায় ১০টির মধ্যে শিল্পকাঠামো দিয়ে এবারের শোভাযাত্রা সজ্জিত হবে। জলরং ও তেলচিত্রে চিত্রকর্ম, সরাচিত্র, মুখোশসহ শোভাযাত্রার অর্থ সংগ্রহের নানা অনুষঙ্গের তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
পয়লা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) সকাল নয়টার পরপরই বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিভিন্ন লোকজ শিল্পকাঠামো নিয়ে এ শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) চত্বর ঘুরে চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। ঐতিহ্য অনুযায়ী এর উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য।
১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুরুর বছরেই তা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে এটা বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এ আনন্দ শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম লাভ করে। এর আগে ১৯৮৫ সালে যশোরে এটি প্রথম বের হয়, সেখানেও চারুকলার শিক্ষার্থীরা এতে জড়িত ছিলেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্বীকৃতি চেয়ে ইউনেসকোতে আবেদন করে। স্বীকৃতি দেওয়ার মূল কাজটি করে ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অব দ্য ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’। কয়েক ধাপ পর্যালোচনার পর ২০১৬ বছরের ৩০ নভেম্বর ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত কমিটির একাদশ সম্মেলনে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
মঙ্গল শোভাযাত্রার আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে, এটি আয়োজন করার ক্ষেত্রে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া হয় না। চারুকলার শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা চিত্রশিল্পীদের অনেকে তাঁদের চিত্রকর্ম বিক্রি করে যে অর্থ পান, তা-ই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের মূল উৎস।