'আমানুর ও তাঁর ভাইয়েরা হত্যার হুমকি দিতেন'

প্রথম অালো ফাইল ছবি
প্রথম অালো ফাইল ছবি

সাংসদ আমানুর রহমান খান (রানা) ও তাঁর ভাইয়েরা বিভিন্ন সময় ফারুক আহমেদকে হত্যার হুমকি এবং টাঙ্গাইল ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু তাঁরা এতই ভয়ংকর ছিল যে ভয়ে এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়নি। এমনকি মামলার এজাহারেও এসব ঘটনা তুলে ধরার সাহস হয়নি।

আজ মঙ্গলবার টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বাদী নাহার আহমেদ আমানুরের আইনজীবীদের জেরার সময় আদালতে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘ফারুক নিহত হওয়ার তিন দিন পর আমানুরের বাবা আতাউর রহমান খান আমার বাসায় গিয়ে বলেন, “তুমি চিন্তা কোরো না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাতে চলতে পার, তার ব্যবস্থা আমি ও আমার ছেলেরা করে দেব।” জবাবে তাঁকে বলেছিলাম, টাঙ্গাইল শহরে ফারুকের স্ত্রী হিসেবেই বেঁচে থাকব। আপনাদের কাছে হাত পাতব না।’

টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে মামলার বাদী নিহত ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদের জেরা শুরু হয়। আমানুরের আইনজীবী আবদুল বাকী মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা জেরা শুরু করেন। একপর্যায়ে নাহার আহমেদের সাক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে আইনজীবী বাকী মিয়া নাহার আহমেদকে প্রশ্ন করেন, কেন জিডি করেননি বা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেননি?

চারবার পেছানোর পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি নাহার আহমেদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরে সাক্ষীকে জেরা করার জন্য নির্ধারিত দিন ছিল আজ।

গতকাল সোমবার বিকেলে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সরকারদলীয় সাংসদ আমানুরকে টাঙ্গাইল কারাগারে আনা হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে আমানুরকে আদালতে নেওয়া হয়। ১১টা ২০ মিনিট থেকে টানা দুই ঘণ্টা জেরার পর আদালত মুলতবি করে আগামীকাল বুধবার পুনরায় জেরার দিন ধার্য করেন।

টাঙ্গাইল আদালত পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, মামলার আরও দুই সাক্ষী নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমেদ মিথুনের হাজিরা আদালতে দাখিল করা হয়।

এ মামলার প্রধান আসামি আমানুর ছাড়াও টাঙ্গাইল কারাগারে থাকা আরও তিন আসামি মোহাম্মদ আলী, আনিছুর রহমান রাজা ও মো. সমীরকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া জামিনে থাকা আসামি নাসির উদ্দিন নুরু, মাসুদুর রহমান মাসুদ ও ফরিদ আহম্মেদ আদালতে হাজিরা দেন।

এদিকে এই মামলার আসামি আমানুরসহ অন্য আসামিদের শাস্তির দাবিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান খান সোহাগ ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক তানোর হাসানের নেতৃত্বে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর আমানুর গত ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এ আদালতেই আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১ রয়েছেন।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এ হত্যায় আমানুর ও তাঁর ভাইদের নাম বের হয়ে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এ মামলায় আমানুর ছাড়াও তাঁর তিন ভাই—টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জন আসামি রয়েছে। গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।