স্বামীর দাফনের কথা জানেন না স্ত্রী

স্বামীর দাফন হয়ে গেছে জানতেই পারেননি তিনি। তাঁর জীবনও মৃত্যুর মুখোমুখি। হাসপাতালে অচেতন। শোকে, দুশ্চিন্তায় বিমূঢ় সদ্য কৈশোরে পা রাখা একমাত্র ছেলে। নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা এভাবেই এলোমেলো করে দিয়েছে পাইলট আবিদ সুলতানের পরিবারকে।

নেপালে দুর্ঘটনাকবলিত বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রথমে তাঁকে জানানো হয়েছিল, আবিদ আহত অবস্থায় নেপালে চিকিৎসাধীন। পরে আবিদের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েন আফসানা। গত রোববার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে উত্তরায় বাসার কাছে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে শেরেবাংলা নগরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের পরিচালক কাজী দীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় মেডিকেল বোর্ডের সভা হয়। এরপর গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলম। তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের সহধর্মিণী গত পরশু এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মাথায় অস্ত্রোপচারের পর থেকে তিনি আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তাঁর দুবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয়েছিল। প্রথমবারে ছিল মৃদু, পরেরটি মারাত্মক।

গত রাত আটটার দিকে আফসানার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তাঁর অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে আফসানার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায়
আত্মীয়স্বজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। গতকাল সকালে অনেকেই এসেছিলেন আফসানার অবস্থা জানতে। আফসানার বড় বোনের স্বামী ইমতিয়াজ আহমেদ জানালেন, আবিদ-আফসানার একমাত্র ছেলে তামজিদ বিন সুলতান এবার ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দেবে। আগামী মে মাসে পরীক্ষা। ১৪-১৫ বছরের ছেলেটি প্রায় নিশ্চুপ হয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে এসেছিল। কিন্তু এখানে এসে তো কোনো লাভ নেই, কাউকেই দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তামজিদ এখন উত্তরাতে তার ছোট খালার বাসায় আছে।

ইমতিয়াজ জানান, শ্বশুর আবুল কাশেম বয়োবৃদ্ধ। শাশুড়ি মারা গেছেন। আবিদ সুলতানের মা নেই, আছেন বৃদ্ধ বাবা। এই পরিস্থিতিতে দুঃসংবাদ পেয়ে আফসানার ছোট বোন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আফরিনা খানম দেশ ফিরেছেন। একমাত্র ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আফজাল হোসেন বোন দুলাভাইয়ের দুঃসংবাদ পেয়ে গতকাল দেশে ফিরেছেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, গত সোমবার আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজার পর আবিদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। আবিদ বিমানবাহিনীতে ছিলেন, সে কারণে বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। চিকিৎসক ও পরিবারের পক্ষ থেকে আফসানার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।