মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

বুধবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় পটিয়া মডেল হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
বুধবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় পটিয়া মডেল হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটা আছে, তা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার চট্টগ্রামের পটিয়ায় পটিয়া মডেল হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে শেখ হাসিনা এ কথা জানান। বার্তা সংস্থা ইউএনবি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, এ কথাটা ভুললে চলবে না। কাজেই তাঁদেরকে আমাদের সম্মান দিতেই হবে। তাঁদের ছেলে, মেয়ে, নাতি, পুতি পর্যন্ত যাতে চাকরি পায়, সে জন্য কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘কোটা যদি পূরণ না হয়, তাহলে শূন্য পদে সাধারণ চাকরিপ্রার্থী মেধাবীদের নিয়োগ দিতে কোটার বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, যদি মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন না করতেন, তাহলে কেউ আমরা কোনো চাকরি পেতাম না।’

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রয়েছে। এর বাইরে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর জন্য ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রয়েছে।

কয়েক মাস ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হোক।

চাকরিপ্রার্থীদের এই আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনগণ দুর্নীতিবাজের সঙ্গে নেই
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর এবং চট্টগ্রাম জেলা উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত বিশাল জনসভায় শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের রায় না মেনে বিএনপির তথাকথিত আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ কোনো দুর্নীতিবাজের সঙ্গে নেই। তারা আইন মানবে না, কানুন মানবে না—এমনই তাদের চরিত্র। তারা জনগণের সম্পদ, এতিমের টাকা লুটে খাবে। এ জন্য আদালত শাস্তি দিল কেন? এ জন্য হুমকি-ধমকি, আন্দোলন।’

জনগণ কোনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবাজের সঙ্গে নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ হবে শান্তির দেশ।

খালেদার নামে মামলা করেছে ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন
খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা এবং কারাবাস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমখানার জন্য বিদেশ থেকে টাকা এসেছে—আপনারা চিন্তা করে দেখেন, পবিত্র কোরআনে লেখা আছে, এতিমের হক কেড়ে নিয়ো না। আর তারা কোরআন শরিফের নির্দেশ অমান্য করেছে। এতিমের টাকার একটি টাকাও এতিমখানায় যায় নাই। সব নিজেরা আত্মসাৎ করেছে। এই মামলা আওয়ামী লীগ সরকার নয় বরং খালেদা জিয়ার পছন্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দীন এবং সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই মামলা রুজু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন আর রায় দিয়েছেন আদালত।

প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া, দুই ছেলে তারেক ও আরাফাত রহমান এবং খালেদা জিয়া সরকারের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান কালোটাকা সাদা করেছেন বলে অভিযোগ করে এ অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকার আদালতে খালেদা জিয়ার দুই ছেলের অর্থ পাচার ধরা পড়ার পর তাঁর সরকার সে টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

নৌকায় ভোট দিলে উন্নয়ন দিতে পারব
সবার দোয়া ও আশীর্বাদ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন দিতে পারব।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যদি নৌকায় ভোট পেয়ে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারি, তাহলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে। আমরা এলএনজি আমদানি করছি, এলপিজি করছি, শিল্প-কলকারখানা করছি এবং দেশের যে উন্নতি করছি, তার সবই আপনাদের স্বার্থে। কাজেই একমাত্র নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতি হবে।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর অন্যান্য প্রাক্‌-নির্বাচনী জনসভার মতো জনগণের কাছে হাত তুলে ওয়াদা চাইলে বিশাল জনতা চিৎকার করে এবং দুই হাত তুলে নৌকায় ভোট প্রদানের ওয়াদা করে।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার সমালোচনা করে বলেন, এই চট্টগ্রামে স্কুল শিশুর ওপর বোমা মেরে তার দুই চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীকে পেট্রলবোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে। ২৭ জন পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। বিজিবিকে হত্যা করা হয়েছে। মা, বোন থেকে শুরু করে কোলের শিশু পর্যন্ত কেউ রেহাই পায়নি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে তারা (বিএনপি) মানুষ হত্যা করেছে। চলন্ত ট্রেন ও বাসে আগুন দিয়েছে। চালক-চালকের সহকারী ও সাধারণ মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। ৫০০ মানুষকে হত্যা এবং তিন হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছে তারা।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুসলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, স্থানীয় সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী প্রমুখ জনসভায় বক্তব্য দেন।