দলে চলে রাঙাচ্যাগা

রাঙাচ্যাগা। রাজশাহীর পদ্মার চরে।  ছবি: আদনান আজাদ
রাঙাচ্যাগা। রাজশাহীর পদ্মার চরে। ছবি: আদনান আজাদ

প্রজনন মৌসুমে পুরুষটির পেটে ঘন-কালো রঙের একটা তুলির টান যেন মেরে দেয় প্রকৃতি। সেটা অক্টোবরের দিকে বাংলাদেশে আসার পরও থাকে কিছুকাল। এমনিতে এদের পিঠ-ডানার উপরিভাগ ও মাথার তালু ঘন লালচে-জলপাইরঙা, তার ওপরে ছোট-বড় কালচে ছিট ছোপ থাকে। বুক-পেট-পেটের দুপাশসহ গলা সাদা, চোখের ওপর দিয়ে উপুড়-তৃতীয়ার চাঁদের মতো সাদা ভ্রুরেখা খুবই সুন্দর। চোখের পাশটা জলপাই-লালচে। চোখের মণি কালো। পা ও পায়ের আঙুল কালচে-বাদামি। নখর কালো। লেজের অগ্রভাগের ওপরের অংশও কালো। এদের লকলকে-আঠালো ও কিছুটা ধারালো জিবটার রং পান্না-নীলচে। গ্রীষ্মকালে সব রংই ম্লান হয়ে যায়। পুরুষটির বুক-পেটের কালো রংও উধাও হয়ে যায়।

দলে চলা ও দলে থেকে খাবার অন্বেষণে এরা পরিকল্পনামতো এগোয়। অন্যান্য চর-মোহনাচর পাখিদের সঙ্গেও ঝাঁক বাঁধে। মূল চারণক্ষেত্র দ্বীপচর, সাগরসৈকত, কম জলের জলাভূমি, নদী-চর-হাওর-বাঁওড়-বিল-ঝিল ইত্যাদি। সাগর-নদীতে ভাটার টান লাগতেই পিলপিল পায়ে অসম্ভব দ্রুততায় এগোয় ও খাবার খোঁজে, সৈকতে জল ধেয়ে আসে, আবারও নেমে যায়, ধেয়ে আসে আবারও। মূল খাদ্য এদের নানান জাতের জলপোকা-লার্ভা-সাদা সুতোপোকা ও অন্যান্য পোকামাকড়। বালুও খায়, খায় লোনা মাটি। ভয় পেয়ে ঝাঁক বেঁধে ওড়ে যখন, তখন আকাশে পুঁটি মাছের ঝাঁকের মতো কাত হয় টলটলে জলের তলায় রুপালি ঝিলিক মারার মতো এই পাখিদের বুক-পেটে শীতের রোদের ঝিলিক দেখা যায়, সে দৃশ্য নান্দনিক-সৌন্দর্যে ভরপুর।

শীতের পরিযায়ী এই পাখিদের নাম ‘বাঁকাঠোঁট চা পাখি’। ফকিরহাট-বাগেরহাটে পরিচিত ‘রাঙাচ্যাগা’, ‘ঝিলিক চ্যাগা’ ও ‘পুঁটে চ্যাগা’ নামে। ইংরেজি নাম Dunlin। বৈজ্ঞানিক নাম calidris alpin। দৈর্ঘ্য ১৮-২৩ সেন্টিমিটার। ওজন গড়পড়তা ৪৫ গ্রাম।

যেসব দেশে বাসা করে এরা, সেখানে মাটিতে-ঘাসবনে-লতা-শিকড় দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে চারটি। ডিম ফোটে ২০-২২ দিনে।