আজ ১ মিনিট আলো নিভিয়ে স্মরণ

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কাপুরুষের মতো অপারেশন সার্চলাইট নামে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায়, যা কালরাত হিসেবে পরিচিত।

আজ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট (কেপিআই ও জরুরি স্থাপনা ছাড়া) প্রতীকী ব্ল্যাক-আউট বা আলো নিভিয়ে কালরাত স্মরণ করবে জাতি। দেশের মানুষ এই দিনটি ব্যথাতুর হৃদয়ে পালন করে থাকে। গত বছর ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় অংশ নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মাহুতির প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

বার্তা সংস্থা বাসস অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার ভাষ্য দিয়ে জানায়, শুধু ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী নয় মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই বর্বরতার ইতিহাসকে।

এই গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ সবই ১৯৪৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বর্ণিত সংজ্ঞায় গণহত্যার চূড়ান্ত উদাহরণ।

এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’

২৫ মার্চ দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। এদিন সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাতে সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে।

এদিন মধ্যরাতে ট্যাংক নিয়ে ঢাকার পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা।

পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে সেদিন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড।

কর্মসূচি
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ গণহত্যার ইতিহাস’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

সরকারি দল আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকেল ৪টায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। বাদ জোহর মসজিদুল জামিয়ায় ২৫ মার্চ রাতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রার্থনা সভা। এর মধ্যে রয়েছে সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বালন, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলও এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে।