'সেবা না পেলে কি আর আসি'

বিএসএমএমইউতে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেলে একজন সেবাপ্রত্যাশী। সম্প্রতি তোলা ছবি
বিএসএমএমইউতে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেলে একজন সেবাপ্রত্যাশী। সম্প্রতি তোলা ছবি

‘সেবা ভালো না পেলে কি আর এত দূর থেকে এখানে আসি।’ বললেন শরীয়তপুর থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান মৃধার স্ত্রী রিজিয়া বেগম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও হাসপাতালের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা/তাঁদের পরিবারবর্গের চিকিৎসা সেল’ সম্পর্কে বলছিলেন তিনি।

রিজিয়া বেগম জানালেন, গত প্রায় তিন বছরে চিকিৎসা সেলে এসে অনেকবার চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি রিজিয়াসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলটি তাঁদের জন্য অনেকটা ভরসার জায়গায় পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, এই সেল থেকে গড়ে প্রতিদিন ৩০ জনের বেশি চিকিৎসাসেবা নেন। কোনো কোনো দিন রোগীর সংখ্যা ৫০ জন ছাড়িয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার বাবা, মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা এই সেল থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের সি ব্লকের নিচতলায় এই চিকিৎসা সেলের অবস্থান। ২০১৫ সালের ২০ মে সেলটির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার ১৬২ জন রোগী সেবা নিয়েছেন।

সম্প্রতি সেলে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা সেবা নিতে এসেছেন। সেখানে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, একজন সেবা নিয়ে যাওয়ার পর তিনি অন্যদের জানান। আবার অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হতে এসে চিকিৎসা সেলের সন্ধান পান। অনেকে চিকিৎসা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পেছনে টাকা খরচ করার পর জানতে পারেন এই সেলের কথা।

মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড় পাবেন। কোনো পরীক্ষার খরচ ৫০০ টাকার বেশি হলে দিতে হবে ৪০ শতাংশ। ৫০০ টাকা পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনা মূল্যে করার সুযোগ পাবেন তাঁরা। কেবিন বা শয্যা ভাড়ার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড় পাবেন। হাসপাতালের প্রতি ওয়ার্ডে একটি পুরুষ এবং একটি নারী শয্যা এবং দুটি কেবিন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে জায়গা খালি না থাকলে অন্য শয্যা বা কেবিন ভাড়ার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড় মিলবে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই সেলে চিকিৎসাসেবা পেতে মুক্তিযোদ্ধা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি জমা দিতে হয়। সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসা সেল থেকে কাগজপত্র বুঝে নিতে হয়। সেল থেকেই বলে দেওয়া হয়, রোগীকে কোথায়, কার কাছে যেতে হবে।

সম্প্রতি সেলে কথা হয় রাজধানীতে বসবাস করা নারী মুক্তিযোদ্ধা সেহেলী মাসুদের সঙ্গে। তিনি এসেছেন স্বামীর চিকিৎসার জন্য। এই মুক্তিযোদ্ধা জানালেন, এই হাসপাতালে এ ধরনের চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া যায়, তা জানা ছিল না। হাসপাতালে আসার পর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার পর জানতে পারেন সেলের কথা।

মুন্সিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা রোস্তম আলী হাঁটতে পারেন না, কথা বলেন অস্পষ্ট। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি। রোস্তম আলী এই সেলে এসেছেন চিকিৎসাসেবা নিতে। চাঁদপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধা নিজামুর রহমানের মেয়ে পারভীন আক্তার এসেছেন স্তনের টিউমারের চিকিৎসা নিতে।

সেল চালুর প্রথম দিন থেকে সিনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, তাই মাত্র ছয়জন জনবল দিয়ে সেল পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক (হাসপাতাল) খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়, যাতে কোনো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এখান থেকে সেবা নিতে না পারেন।

সেলের কথা অনেক মুক্তিযোদ্ধাই জানেন না বা সেলে আসার পর জানতে পারেন কী কী কাগজপত্র লাগবে—এ সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, সেলের প্রচার বাড়ানো দরকার।