বর্ষার পানি ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: ফোকাস বাংলা
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: ফোকাস বাংলা

নিজস্ব পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য যেমন ড্রেজিং করতে হবে, তেমনি বর্ষার পানি ধরে রাখারও বন্দোবস্ত রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও ওপর নির্ভরশীল নয়, নিজেদের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। বর্ষাকালে যে বিশাল জলরাশি আসে, সেটা আমরা কীভাবে ধরে রাখতে পারি। আমাদের সেই পরিকল্পনা আগে নিয়ে নিজেদেরটা দেখতে হবে।’

বিশ্ব পানি দিবস-২০১৮ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ২২ মার্চ ছিল বিশ্ব পানি দিবস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো আমাদের দেশে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে নদী ড্রেজিংয়ে নয়, বরং নদীর পাড় বাধাই এবং রাস্তা নির্মাণ বা সেখানকার লোকজনের জন্য পুনর্বাসনসংক্রান্ত প্রকল্পে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেটি মূলত তাদের কাজ নয়।’ তিনি আরও বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজ নদী ড্রেজিং এবং পলি ব্যবস্থাপনা। রাস্তা সরকারের অন্য মন্ত্রণালয় করে দেবে এবং সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রকল্প গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।

মঞ্চে উপস্থিত পানিসম্পদমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মূল দায়িত্বটা কী। নদীকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, নদীর নাব্যতা বাড়ানো যায়, নদীর ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এবং এই নদী আমাদের জন্য অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ হিসেবে যেন নিজের অস্তিত্ব ঠিক রাখতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। নদীভাঙন রোধ করা। এটাও কিন্তু সব থেকে বড় কাজ।’

আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টন নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সমস্যা থাকার প্রসঙ্গ স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০ নদী এবং ভারতের সঙ্গে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে। এই নদীগুলো হিমালয় থেকে ভারত হয়ে এসেছে। এগুলো নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। যেটার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ভারতের কাছ থেকে এই গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক পানি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পানির হিস্যা নিয়ে এখনো ঝামেলা চলছে।’

তিস্তা ব্যারাজ করলেও এর ভবিষ্যৎ ও পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে চিন্তা করা হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ব্যারাজ করার আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল যে আমরা ভাটির দেশে বসবাস করি। এখন সেই তিস্তার পানি নিয়ে আমাদের সমস্যা চলছে।’

ভারতের সঙ্গে নদীসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই অনেক কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য নদী নিয়েও আলোচনা চলছে এবং তিস্তা নিয়েও আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় মনে করি, ড্রেজিং করে নব্যতা বাড়িয়ে বর্ষাকালে যে পানিটা হিমালয় থেকে নেমে আসে, সেটা যতটা বেশি আমরা সংরক্ষণ করতে পারব, তত বেশি আমাদের দেশের জন্য উপকার হবে।’

পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম বীরপ্রতীক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে দেশের পানি ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কূটনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রাতনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।