ঢাবির এক শিক্ষককে ছাত্রলীগের অবাঞ্ছিত ঘোষণা

সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। মার্কেটিং বিভাগের ওই শিক্ষক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খানকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে অধ্যাপক মোর্শেদের বরখাস্তের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। ঘণ্টা খানেক অবস্থান শেষে তাঁরা আজ বুধবার উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।

প্রসঙ্গত, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেন। তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা ওই সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুও।

এই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনের (সাদা দল) যুগ্ম আহ্বায়ক।

লেখাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানান। গতকাল দুপুরে মধুর ক্যানটিন থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, লেখাটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে ধরনের মিথ্যাচার করা হয়েছে, তাতে অধ্যাপক মোর্শেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার নেই। তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি লেখাটি উইথড্রো করে নিয়েছি। সংবাদপত্রটিও তাদের লেখা সরিয়ে নিয়েছে। লেখাটি অনেককে ব্যথিত করেছে। আমি তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’ ওই সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সনে সন্ধ্যায় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়, ওই প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ব্যবহৃত বাক্যগুলো প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে মোর্শেদ হাসান খান বলেছেন, ‘আশা করি, আমার অসচেতনতাকে সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, সমিতির কার্যনির্বাহী সভা মনে করে, এটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্রের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।