বিমানবন্দরে প্রথম স্বাগত জানায় মশা!

‘এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকার জো নেই। এমন কোনো জায়গা খুঁজে পাবেন না, যেখানে একটু সুস্থির হয়ে থাকা যায়।’ বলছিলেন ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ শোয়েব তারিক।

শোয়েবসহ আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় বিমানবন্দরে। মশার উপদ্রবে তাঁরা সবাই ক্ষুব্ধ।

বুধবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালের প্রবেশমুখে দর্শনার্থীদের জটলা। তাঁদের ঘিরে ধরেছে মশা। কেউই এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারছেন না।

বিমানবন্দর থেকে একটি পর্যটন মোটেলে নিয়মিত যাত্রী আনা-নেওয়া করেন গাড়িচালক সেলিম মিঞা। তিনি বলেন, ‘শুধু দেখি সিটি করপোরেশন ধোঁয়া দেয়। এতে এই বড় বড় মশার কিছু হয় না।’ তিনি বলেন, বিমানবন্দর ঘিরে আছে অসংখ্য ছোট-বড় জলাশয়। ওখানেই জন্ম নেয় মশা। ওই জায়গা পরিষ্কার না করলে এখান থেকে মশা যাবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মী বলেন, বিমানবন্দরে সারা বছরই মশার দাপট চলে। রানওয়ে, ক্যানপি ব্রিজ, গ্রিন চ্যানেল ও টার্মিনালের ভেতরেও আছে মশার দৌরাত্ম্য। এতে একপ্রকার অসহায় বিমানবন্দর এলাকায় কর্মরত লোকজন, সাধারণ যাত্রী ও দর্শনার্থীরা। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি থাকে। এপ্রিলের শেষ দিকে বৃষ্টি নামলে দাপট কিছুটা কমে।

সদ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা আবুল ফজল বলেন, ‘বিমানের চাকা দেশের রানওয়ে ছুঁতেই সারা শরীরে একটা অন্য রকমের রোমাঞ্চ খেলা করছিল। কিন্তু দরজা খুলতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঢুকে পড়ল বিমানে। দেশে প্রথম স্বাগত জানাল মশা।’ তিনি বলেন, বিমানে বিদেশি যাত্রীও ছিলেন। এত মশা দেখে তাঁরা এ দেশ সম্পর্কে কী ভাববেন!

লালমনিরহাট থেকে ফ্রান্সপ্রবাসী ভাইকে নিতে আসা দ্বীপান্বিতা সেন বলেন, ‘এখানে বসার কোনো জায়গা নেই। ক্যানটিন এরিয়ায় বাথরুমের দুর্গন্ধ আর মশার জ্বালায় থাকা যায় না। তাই গাড়ির কাছে আসলাম। এখানে তো দেখি মশারা পারলে তুলে নিয়ে যায়। গাড়ির ভেতর ঢুকে থাকা ছাড়া উপায় নেই।’

পাশ থেকে একজন মজা করে বলেন, ‘ভাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তাই এখানকার মশারা বহুজাতিক। দেখেন না সাইজে কত্ত বড়। সিটি করপোরেশন কিংবা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এর কোনো কূল করতে পারছে না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক এম এম মোশারেফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন ‘আমরা নিয়মিত চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে ১০ দিনের একটি মশক নিধন কর্মসূচি শেষ হয়েছে। এতে অনেকটা মশার প্রাদুর্ভাব কমেছে। পয়লা এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে আরও একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি এতে অবস্থার পরিবর্তন হবে।’