'দেখামাত্রই প্রতিবাদ করতে হবে'

রাজধানীর পথে-ঘাটে প্রায়ই হয়রানি ও নিগ্রহের শিকার হন নারীরা। এ বিষয়ে পাঠকের অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয় ঠেকানোর উপায়ও। প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে আসে অনেক ধরনের মন্তব্য।

বেশির ভাগ পাঠকই হয়রানি প্রতিরোধে জনসচেতনতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁদের মতে, এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখামাত্রই প্রতিবাদ করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিকে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে।

সাফা আহমেদ ও মুনতাসির আহমেদ নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

সাফা আহমেদ লিখেছেন, ‘অফিস করি মহাখালী ডিওএইচএসে। বাসায় বাসে করে ফিরি মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে। সপ্তাহে অন্তত তিন দিনই কিছু না কিছু ঘটেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে গায়ে হাত, বাজে মন্তব্য, বাসে নাজেহাল! আমি কখনই চাই না আমার মেয়ে এই দেশে জন্ম নিক বা থাকুক! অন্যায়ের বিচার না হতে হতে আজ এই অবস্থা। যতগুলো অপরাধ হচ্ছে, তার সিকি ভাগেরও বিচার হলে এমন হতো না! আজকে ঘর থেকে বের হতে গেলেই আমার ভয় লাগে। কোথাও আমরা নিরাপদ নই।’

মুনতাসির আহমেদ লিখেছেন, ‘একদিন আমি আর আমার খালাতো ভাই আমার বোনকে কোচিংয়ে দিতে যাওয়ার সময় দেখি যে কিছু লোক আমার বোনের দিকে একদৃষ্টিতে বাজেভাবে তাকিয়ে আছে। পরে আমরা দুই ভাই রাস্তাতেই ওদের সামনে গিয়ে চিৎকার করে ধমকাতে থাকি। আশপাশের লোক জড়ো হয়, এক পরিচিত আংকেল ছিল সেখানে, সে পর্যন্ত গালাগাল শুরু করে। পরে জটলা সরিয়ে বোনকে কোচিংয়ে দিয়ে আসি। সেটাই জীবনের প্রথম হয়েছিল যে আমার সামনে আমার রক্তের দিকে কেউ তাকিয়ে আছে খারাপ দৃষ্টিতে!’

প্রতিরোধের নানা উপায় জানিয়েছেন পুরুষেরা। মো. মিনহাজুল ইসলাম লিখেছেন, ‘সঠিক বিচারব্যবস্থাই পারে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে। কারণ বিচারহীনতাই অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি করে। ধর্ষণকারী কোন দলের তা বিবেচনা না করে বিচার করতে হবে।’

মো. আল আমিন শিকদার লিখেছেন, ‘জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। একজন মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে দেখলে পাশের মানুষগুলো এগিয়ে আসে না। সবাই মিলে ইভ টিজারদের প্রতিরোধ করতে হবে। সব সময় সব কাজ পুলিশ দিয়ে হয় না।’

আরিফুর রহমানের মতে, যাঁরা এ ধরনের ঘটনা দেখে প্রতিবাদ করতে যায়, তাঁদের অনেককেই আশপাশ থেকে নেতিবাচক কথা শুনতে হয়। লিখেছেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ছেলে যদি মেয়েদের হয়ে কিছু বলে, সেটা নাকি চামচামি করা হয়। তাহলে তারা কি ধর্ষণ করে বা ধর্ষণের সাপোর্ট করে পুরুষত্ব প্রমাণ করতে চাইছে? তাঁর মতে, ধর্ষণের শাস্তি কোনো জেল জরিমানা নয়। ধর্ষণের এক এবং একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত। শিশু ধর্ষকের মতো কুলাঙ্গারদের জনসম্মুখে ফাঁসি দেয়া হোক।’

এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমাতে মানসিকতা উন্নয়নের বিকল্প নেই। এমনটাই বলেছেন রেদোয়ান বারী শিমুল। লিখেছেন, ‘আসল কথা হচ্ছে আমরা ক্রমেই অসভ্য হয়ে যাচ্ছি। পর্দা করা উচিত কিন্তু তাই বলে ধর্ষণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। এটা আসলে বিকৃত মানসিকতা।’

এ ধরনের হয়রানি ও নিগ্রহের ঘটনা যে সারা দেশেই ঘটছে সেটা মনে করিয়ে দিয়ে রাসেল সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘আমি রাজধানীর লোক নয়, আমি থাকি গ্রামে। আমি আমার দেখা কয়েকজন বখাটের কথা বলি, আমাদের গ্রামের প্রায় মেয়েরা এখন লেখাপড়া করে কিন্তু আসা–যাওয়ার সময় অনেককেই যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। ওই বখাটেরা সবাই প্রভাবশালী, ইয়াবা বিক্রির টাকার মালিক। কেউ তাদের কিছু বলতে ভয় পায়।’

মনিরুল ইসলামের মতে নারীরা কোথাও নিরাপদ নন। লিখেছেন, ‘নারীরা শুধু রাজপথ নয়, বাসা, অফিস, কম্বাইন্ড স্কুল–কলেজ না হয় বাদই দিলাম, নারী সংশ্লিষ্ট স্কুল–কলেজে, আজ চরম ঝুঁকিতে আছে। এমতাবস্থায়, থানাগুলোকে অভিযোগ পাওয়ামাত্র ব্যবস্থা নিতে হবে।’

আবদুল জলিল লিখেছেন, ‘যেকোনো হয়রানিতে নারীদের প্রতিবাদে উৎসাহিত করতে হবে, পাশাপাশি হয়রানিকারীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।’

রাহুল খুব গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি করেছেন। বলেছেন, ‘প্রতিটি পরিবারের উচিত তাদের ছেলে বা মেয়েকে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ সম্পর্কিত শিক্ষা দেওয়া।’

(মন্তব্যগুলো প্রথম আলোর ভাষারীতি অনুযায়ী সম্পাদিত)