দাদিকে হত্যায় নাতির মৃত্যুদণ্ড

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর এলাকায় দাদিকে হত্যার দায়ে নাতিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে স্বর্ণালংকার ও মোবাইল চুরির দায়ে তাঁকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ সালেহ উদ্দিন আহমদ এই দণ্ডাদেশ দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত ওই নাতির নাম মোখলেছুর রহমান (২৫)। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। আর নিহত ওই দাদির নাম করফুলেন্নাসা। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৪ মে করফুলেন্নাসার সঙ্গে রাতে ঘুমাতে যান নাতি মোখলেছুর রহমান। ওই রাতে দাদির সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন চুরির পর তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যান মোখলেছুর। এ ঘটনায় পরের দিন মোখলেছুরকে আসামি করে করফুলেন্নাসার ছেলে আফাজ উদ্দিন প্রধানিয়া মতলব উত্তর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতলব উত্তর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবু হানিফ ২০১৪ সালের ২০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন।

সরকার পক্ষের আইনজীবী মো. আমান উল্যাহ বলেন, আদালত ১৩ জন সাক্ষীর ভিত্তিতে এবং আসামি মোখলেছুরের জবানবন্দিতে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড এবং স্বর্ণালংকার ও মোবাইল চুরির দায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আদালত পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে কারারক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে চাঁদপুর জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যান আসামি মোখলেছুর রহমান। এ কারণে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নির্দেশ দিয়েছেন।

ব্যবসায়ী হত্যায় চার জনের যাবজ্জীবন

ঈদুল আজহায় বাড়ি ফেরার পথে মো. ইউসুফ নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যার মামলায় চার ছিনতাইকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ নুরে আলম ভূঁইয়া এই রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মো. শাহাবুদ্দিন, এনামুল হক, মো. মেহেরাজ ও মো. রাশেদ। এদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন ও রাশেদ পলাতক রয়েছেন।

সরকারি কৌঁসুলি নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ইউসুফ পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যবসা করতেন। ঈদুল আজহায় গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায় যাওয়ার জন্য ২০১১ সালের ১ নভেম্বর নগরের কাপ্তাই রাস্তা মাথা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। তখন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরও ওঠে ওই অটোরিকশায়। কিছু দূর যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। পরে তাঁকে হত্যা করে রাত আটটার দিকে তাঁর লাশ বোয়ালখালীর ফুলতলা এলাকায় ফেলে রাখা হয়। এই ঘটনায় নিহত ইউসুফের ভাই মো. ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ পরের বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়। ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এই রায় দেন।

হত্যা মামলায় নাতিন জামাইসহ ছয় জনের যাবজ্জীন

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চাঞ্চল্যকর আঙ্গুরা আবেদীন (৫৫) অপহরণ ও হত্যা মামলায় তাঁর নাতিন জামাইসহ ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও এক পুত্রবধূকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. হাসানুজ্জামান। মঙ্গলবার দুপুরে এই রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে নিহত আঙ্গুরার ছেলেসহ পাঁচ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মামলার ১২ আসামির মধ্যে রায় ঘোষণার সময় আদালতে জামিনে মুক্ত নয় আসামি উপস্থিত ছিলেন। বিধবা আঙ্গুরা আবেদীনকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাঁর নাতিন জামাই শামীম হোসেন ওরফে জীবন (২৪), তাঁর সহযোগী মিল্টন মিয়া (৩৮), আশরাফুল ইসলাম (২৮), সেলিম হোসেন (৩১), শফিকুল ইসলাম ওরফে মুকুল (৪২) ও ছামাদ মোল্লাকে (৩৮) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এদের মধ্যে ছামাদ মোল্লা ও মিল্টন মিয়া পলাতক রয়েছেন। অপহরণের দায়ে নিহতের পুত্রবধূ বিউটি আক্তারকে (৪২) সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। রায়ে নিহতের ছেলে কামরুল ইসলাম, পলাতক আসামি হাসান আলী টুমন, জিয়াউল ইসলাম জিয়া, ওয়াজেদ আলী ও রফিকুল ইসলাম ডাবলুকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর। তিনি ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর বড়াইগ্রাম আমলী আদালতে মামলা করেন। তাঁর মা আঙ্গুরা আবেদীন বিত্তশালী ছিলেন। সম্পদ লিখে না দেওয়ায় তাঁর অপর ছেলে কামরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী বিউটি আক্তার ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে আঙ্গুরা আবেদীনকে অপহরণ ও হত্যা করেছেন। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নূরে আলম তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের সময় তিনি আসামি বিউটি আক্তার, শামীম হোসেন জীবন ও মিল্টন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁরা নাটোরের বিচারিক হাকিম মাহমুদুল হাসানের কাছে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ১০ জুলাই ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামিদের মধ্যে অন্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় শিশু আদালতে তাঁর বিচার শুরু হয়।

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজে ১২ আসামির বিচার চলাকালে ১৪ জন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক ওই রায় দেন।