সূর্য, বক, হাতি, মহিষ নিয়ে অপেক্ষায় প্রাণের শোভাযাত্রা

মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা মহিষের কাঠামোটি সংস্কার করতে হচ্ছে শিল্পীদের। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় কে বা কারা মহিষের কাঠামো থেকে কিছু অংশ খুলে পুড়িয়ে দেয়। চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৩ এপ্রিল। ছবি: আবদুস সালাম
মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা মহিষের কাঠামোটি সংস্কার করতে হচ্ছে শিল্পীদের। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় কে বা কারা মহিষের কাঠামো থেকে কিছু অংশ খুলে পুড়িয়ে দেয়। চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৩ এপ্রিল। ছবি: আবদুস সালাম

চারুকলার গেট দিয়ে ঢুকতে হাতের ডানে বেগুনি রঙের একটি ব্যানার টাঙানো। সেখানে সাদা অক্ষরে লেখা মঙ্গল শোভাযাত্রার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। শেষ বাক্যে লেখা, ‘সবাই আমন্ত্রিত’।
রাত পোহালেই শুরু হবে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। রাজধানীতে এই শোভাযাত্রার জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। এবার আট প্রতীক নিয়ে শুরু হবে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতীক বানানোর কাজে সেখানে ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।

আজ শুক্রবার সকালে চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ততা, হাঁকে-ডাকে মুখর পুরো এলাকা। গুটি গুটি পায়ে শিশুরা ঘুরছে। এটা কী, ওটা কী প্রশ্নের ক্লান্তিহীন জবাব দিয়ে যাচ্ছেন মা-বাবা। জয়নুল শিশুকলা নিকেতনের ঘরটিতে কাগজের পাখি তৈরি হচ্ছে। পাখিদের গায়ে রং করছে শিশুরাই। পাশ থেকে বড়রা তা দেখিয়ে দিচ্ছেন। এর পাশের ভবনের বারান্দায় উপুড় হয়ে আঁকিবুকি করছে কয়েক শিশু। আরেক পাশে সারি সারি করে খবরের কাগজে মোড়ানো মানুষের মুখের আদল। বিশালাকায় কাঠামোয় তৈরি করা হয়েছে লাল-সাদা বক, হলুদ-লাল হাতি। বকের ঠোঁটের সামনে সমান আকৃতির একটি মাছও রাখা হয়েছে।

এখনো কাগজের মুখোশ বানানো চলছে। চাইলে মুখোশ কেনাও যাচ্ছে। চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৩ এপ্রিল। ছবি: আবদুস সালাম
এখনো কাগজের মুখোশ বানানো চলছে। চাইলে মুখোশ কেনাও যাচ্ছে। চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৩ এপ্রিল। ছবি: আবদুস সালাম

প্রস্তুতির কাজে থাকা ছাপচিত্র বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার আটটি প্রতীক—সূর্য, বক-মাছ, হাতি, পাখি, সাইকেলে মা-শিশু, টেপা পুতুল, মহিষসহ চারটি পাখি ও জেলে রাখা হয়েছে। এগুলো তৈরি হচ্ছে বাঁশ, কাঠ ও বিভিন্ন রঙের কাগজ দিয়ে। তিনি জানান, প্রতীকের কাজ শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রার অর্থ সংগ্রহ করতে এক মাস আগে থেকেই মুখোশ, পেইন্টিংসহ নানান জিনিস তৈরি করে বিক্রি করা হয়।
টেপা পুতুলসহ কয়েকটি প্রতীকের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। শাকিল বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি। মহিষের প্রতীকটি তৈরিই ছিল। সেখান থেকে কিছু জিনিস খুলে পোড়ানো হয়েছে। আশপাশে আরও বাঁশ-কাঠ ছিল, তা-ও নেই। এখন সেগুলো সংস্কার করতে হচ্ছে। অন্যবার বিকেলের মধ্যে কাজ শেষ করে বকুলতলার চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবে আমরা যোগ দিতাম। এবার তো মনে হচ্ছে সারা রাত কাজ করতে হবে।’ তবে তাঁর বিশ্বাস, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা নয়, দুর্বৃত্তদের কেউ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে এসব পুড়িয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য বক, মাছ, হাতির কাঠামো তৈরির কাজ শেষ। চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৩ এপ্রিল। ছবি: আবদুস সালাম
মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য বক, মাছ, হাতির কাঠামো তৈরির কাজ শেষ। চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৩ এপ্রিল। ছবি: আবদুস সালাম

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এসব এলাকা অবরুদ্ধ ছিল। এ কারণে চারুকলায় দর্শনার্থী খুব কম ছিল। আন্দোলন স্থগিত হওয়ায় চারুকলা অনুষদ ঘিরে আজ সকাল থেকেই ভিড় বাড়ছে। সবাই ঘুরছেন, প্রস্তুতি দেখছেন, ছবি তুলছেন। কয়েকজন বিদেশিকেও ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে দেখা গেছে।

ধানমন্ডি থেকে এসেছেন তাহুরা ইয়াসমিন। মুখোশ দেখতে দেখতে বললেন, ‘বৈশাখের আগের সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই বিকেলের দিকে চলে আসি। কিন্তু এবার তা পারিনি। তাই আজ সকালেই চলে এসেছি। বিকেলে এদিকে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে।’
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ লালন সাঁইয়ের এই গানের চরণ এবারের উৎসবের প্রতিপাদ্য। মূলত আজ বিকেল থেকেই বাংলা নববর্ষকে বরণ করার উৎসব শুরু হয়ে যাবে। বকুলতলায় চৈত্রসংক্রান্তিতে বসবে লোকগানের আসর। কাল শনিবার সকাল আটটায় শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলার এ মাসব্যাপী আয়োজন কাল পরিণত হবে সবার অংশগ্রহণে প্রাণের উৎসবে।