দেখতে পান না, তাই বাসাও মেলে না

প্রতীকী ছবি। রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। রয়টার্স

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীরা আবাসন সমস্যায় ভোগেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় তাঁদের অনেক কিছু ভাবতে হয়। তাঁদের এমন জায়গায় বাসা নিতে হয়, যার সামনে কোনো নর্দমা বা ড্রেন থাকবে না। বাসাটি প্রধান সড়কের কাছাকাছি হলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সুবিধা হয়। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সহজে বাসার অবস্থান বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। বাসাটি এমন জায়গায় হতে হয়, যেখান থেকে যাতায়াতের জন্য সহজে যানবাহন পাওয়া যায়।

এত সব মেলাতে গিয়ে অনেক বেশি ভাড়া দিতে হয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের। কিন্তু এরপরও অনেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বাসা ভাড়া দিতে চান না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা বাড়ির দেখাশোনা ঠিকমতো করতে পারবেন না, বাড়ি নোংরা করবেন—এমন নানা অভিযোগ করেন বাড়িওয়ালারা।

বাসা ভাড়া পেতে গিয়ে এ ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

ফাহিমা খাতুন আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত। তাঁর বাসা মুগদায়। অফিস পুরানা পল্টনের দৈনিক বাংলা মোড়ে। দুই রুমের ফ্ল্যাটে তিনি বোন, মা ও ভাগনির সঙ্গে থাকেন।

বাসা খোঁজার সময় তাঁকে বলা হতো, তিনি বাসার দেখাশোনা ঠিকভাবে করতে পারবেন না। কিন্তু ফাহিমা মনে করেন, দুর্ঘটনা যেকোনো সময় যে-কারও সঙ্গে হতে পারে। অনেকেই সেটা ভাবে না।

সৈয়দা সানজিদা আলম কাজ করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তাঁর কর্মস্থল মানিকগঞ্জে। পরিবার থাকে ঢাকায়। প্রতিদিন ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জে যাতায়াত করেন সানজিদা। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় নিরাপত্তার কথা সবার আগে ভাবেন সানজিদা। তাঁর কর্মক্ষেত্রে ডরমিটরির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি সেখানে থাকার সুযোগ পাননি। সানজিদা চান, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী মেয়েদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেন আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এটা থাকলে ঢাকার বাইরে বা দেশের যেকোনো জায়গায় প্রতিবন্ধী মেয়েরা কাজ করতে পারবেন।

নাজমা বেগম বাংলাদেশ বিজিট ইম্পোট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামেও দায়িত্ব পালন করছেন। নাজমার বাড়ি চট্টগ্রামে। থাকেন ঢাকায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি হোস্টেলে থাকেন। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকরির পর বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় দেখেন, কেউ তাঁকে ভাড়া দিতে চান না। নয় বছর ধরে চাকরি করছেন নাজমা। তিন থেকে চারবার বাসা বদলেছেন। আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও ভালো বাসাগুলো তাঁদের কেউ ভাড়া দিতে চান না। আত্মীয়স্বজন, পূর্বপরিচিত লোকজনের সাহায্য নিয়ে তিনি বাসা ভাড়া নিয়েছেন।

সরকারি চাকরিজীবী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি হোস্টেলে আলাদা কর্নার করার দাবি জানিয়েছেন নাজমা।

মিরপুর ১৪ নম্বরে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ হোস্টেলে থাকতে হলে অনেক নিয়মকানুন পালন করতে হয়। সেখানে আসনসংখ্যাও সীমিত। সেখানে থাকার ব্যবস্থা আরও সহজ করার দাবি জানান নাজমা।

(লেখক প্রথম আলোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাংবাদিক)