নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বাংলাদেশে আসছেন

নিরাপত্তা পরিষদের মিশনের ফলে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দুর্দশা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়বে। রয়টার্স ফাইল ছবি
নিরাপত্তা পরিষদের মিশনের ফলে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দুর্দশা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়বে। রয়টার্স ফাইল ছবি
>

• ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত এই সফর
• সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক ও মিয়ানমার সফর করবেন
• প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবে

রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সঙ্গে কথা বলতে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এ মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছেন। তাঁরা প্রথমে ঢাকা ও পরে কক্সবাজার পরিদর্শন করবেন। শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের একথা জানান। ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত স্থায়ী এই সফরকালে পরিষদের সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক ও মিয়ানমার সফর করবেন।

জানা গেছে, প্রতিনিধিদল ২৯ এপ্রিল কক্সবাজার উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবে। গত শনিবার নিউইয়র্কে প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এ কথা নিশ্চিত করেন। সিরিয়া প্রশ্নে কোনো জরুরি অবস্থা সৃষ্টি না হলে এই সফর নির্ধারিত তারিখেই অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই বাংলাদেশ এই সফরের অনুরোধ করে আসছে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রতিনিধিদলের সফরের ফলে পরিষদের সদস্যরা শুধু সংকটের তীব্রতা ও ব্যাপকতা সম্যক উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন তা-ই নয়, মিয়ানমার সরকারের ওপর সংকট সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণে চাপ দিতেও সক্ষম হবে।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ জানান, বাংলাদেশের সফরের পর প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে যাবে সে দেশের সরকারের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে। তিনি মনে করেন, এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অব্যাহত সংযুক্তি অত্যন্ত জরুরি। মিয়ানমার উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি। তার ওপর অব্যাহত চাপ ছাড়া মিয়ানমার এই সংকট সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন এই বাংলাদেশি কূটনীতিক।

জাতিসংঘও এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। স্তেফান দুজারিক সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তা পরিষদের এই মিশনের ফলে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দুর্দশা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়বে।

জাতিসংঘ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার প্রশ্নে একজন বিশেষ দূতের নিয়োগের ব্যাপারে মহাসচিবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই নিয়োগ চূড়ান্ত করে গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতির ভিত্তিতে একজন যথাযোগ্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব ইতিমধ্যেই একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন, কিন্তু কোনো প্রার্থীর ব্যাপারেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। যেসব প্রার্থীর কথা এই পদের জন্য ভাবা হয়েছে, তাঁদের অন্যতম হলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড। মিয়ানমার সরকারের প্রতি তাঁর মনোভাব আপসমূলক, এই যুক্তিতে তাঁর ব্যাপারে কোনো কোনো মহল থেকে আপত্তি জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করলেও কেভিন রাড এর জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির কাঁধে কোনো দায়দায়িত্ব চাপাতে রাজি নন।

এই বক্তব্যের সমালোচনা করে অস্ট্রেলিয়ার লোয়ি ইনস্টিটিউটের অন্যতম গবেষক কেভিন কনেলি বলেন, এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। প্রধান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা অং সান সু চিরই রয়েছে।

জানা গেছে, একাধিক স্ক্যান্ডিনেভীয় কূটনীতিকের কাছে এই দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব গেলেও তাঁরা আগ্রহ দেখাননি। মিয়ানমার সরকারের অনমনীয় মনোভাবের কারণে চলতি সংকট সমাধানে সাফল্যের সম্ভাবনা সীমিত-এই বিবেচনা থেকেই তাঁরা দায়িত্ব গ্রহণের ব্যাপারে অনাগ্রহী বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানানো হয়েছে।