শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে

বিইআরসির সূত্র জানায়, গড়ে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বর্তমান দাম ৭ টাকা ৩৯ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা হবে। আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর করার জন্য প্রস্তাবে বলা হয়েছে। তবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের এই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মত হচ্ছে, দাম না বাড়িয়েই কয়েকটি খাত থেকে অর্থ নিয়ে বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করা সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ ব্যবহার; গ্রাহকদের কাছ থেকে সম্পূরক শুল্ক হিসেবে আদায় করা অর্থ ব্যবহার; অবৈধ সংযোগ ও চুরি বন্ধ প্রভৃতি।

এর আগে গত বছর ১ মার্চ ও ১ জুন থেকে দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর আদেশ দিয়েছিল বিইআরসি। কিন্তু সে আদেশ অনুযায়ী ১ মার্চ দাম বাড়লেও দ্বিতীয় দফায় ১ জুন থেকে দাম বাড়েনি। ক্যাবের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট দ্বিতীয় দফার মূল্যবৃদ্ধি স্থগিত করে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি নিয়ে প্রথম জাহাজটি ২৩ কিংবা ২৪ এপ্রিল মহেশখালীতে পৌঁছাবে। এরপর কয়েক দিন লাগবে কিছু কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। এলএনজি থেকে পাওয়া গ্যাস আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু করা হবে। বছরের শেষ দিকে প্রতিদিন আরও ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি থেকে জাতীয় গ্রিডে দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) আবদুল আজিজ খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবগুলোতে কিছু ঘাটতি আছে। সে জন্য প্রয়োজনীয় আরও কিছু তথ্য কোম্পানিগুলোর কাছে চাওয়া হয়েছে। সেগুলো পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

জ্বালানি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার এলএনজির দাম পড়বে ২৫ দশমিক ২১৫ টাকা। এই এলএনজি পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করার জন্য প্রতি ইউনিটে ব্যয় হবে ১ দশমিক ৫১৪ টাকা। মূল্য সংযোজন কর ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি ইউনিটে ব্যয় হবে ৩ দশমিক ৭৮২ টাকা। তবে এই হিসাবে সরকারকে দেওয়া ৯৩ দশমিক ২৪ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ধরা হয়নি। সরকার এলএনজির ওপর থেকে এই শুল্ক তুলে দিয়েছে।

কোম্পানিগুলোর দেওয়া প্রস্তাবে গ্রিডে সংযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের দাম ২০৬ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরবরাহ করা প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়বে ১০ টাকা, যা বর্তমানে ৩ টাকা ১৬ পয়সা। সিএনজির দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে প্রতি ইউনিটের দাম বর্তমানের ৩২ টাকার স্থলে পড়বে ৪০ টাকা। সার কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ৩৭২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে বর্তমানের ২ টাকা ৭১ পয়সার স্থলে দাম পড়বে ১২ টাকা ৮০ পয়সা।

শিল্পের বয়লারে ব্যবহারের জন্য দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৩ শতাংশ, যাতে বর্তমানের ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ১৫ টাকা। বেসরকারি মালিকানার শিল্পকারখানার নিজস্ব ব্যবহারের জন্য উৎপাদিত (ক্যাপটিভ) বিদ্যুতের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৬ শতাংশ, যাতে প্রতি ইউনিটের বর্তমান দাম ৯ টাকা ৬২ পয়সার স্থলে বেড়ে হবে ১৬ টাকা। চা-বাগানের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৩ শতাংশ, যাতে প্রতি ইউনিটের দাম বর্তমানের ৭ টাকা ৪২ পয়সার স্থলে বেড়ে হবে ১২ টাকা ৮০ পয়সা।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, দাম না বাড়িয়েও বাড়তি ব্যয় সমন্বয়ের বিষয়ে তাঁরা একটি প্রস্তাব তৈরি করেছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সেটি বিইআরসিতে উপস্থাপন করা হবে।