বিজিবির তিন সদস্যের দাফন

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে গত বুধবার সেনাবাহিনীর ভারী অস্ত্র প্রশিক্ষণ এলাকায় মর্টার শেল বিস্ফোরণে নিহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তিনজন সদস্যকে গতকাল শুক্রবার নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। এ সময় গ্রামগুলোতে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিজিবির সদর দপ্তর পিলখানায় বৃহস্পতিবার তাঁদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজিবির এই তিন সদস্য হলেন সিপাহি আবু সুফিয়ান ও একরাম হোসেন এবং ল্যান্স করপোরাল মোহাম্মদ আলী। ঘাটাইলে দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর দুই সদস্যও নিহত হন। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-এর পাঠানো খবর:
একরাম হোসেনকে গতকাল বেলা ১১টায় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার চান্দুলিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এদিন ভোর পাঁচটার দিকে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি এসে পৌঁছায়। জানাজা ও দাফনে বিজিবির খুলনা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল নূরুল হুদা, ৩৪ সাতক্ষীরা নীলডুমুর বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনারুল আলম ও অপারেশন অফিসার মেজর কাজী আহাদুল ইসলাম, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুখ হোসেন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ছয় ভাইবোনের মধ্যে একরাম ছিলেন তৃতীয়। ২০০৬ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) যোগ দেন। দুই বছর আগে বিয়ে করেন। একরাম চার মাস বয়সী এক মেয়ে রেখে গেছেন। তিনি দিনাজপুর সেক্টরের জয়পুরহাট ৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন।
বিজিবির আরেক সদস্য আবু সুফিয়ানের জানাজা সকাল সাড়ে আটটায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পরমালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তাঁকে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নিজ গ্রাম মালিপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে কফিন বাড়িতে এলে সুফিয়ানের ছয় মাস বয়সী মেয়ে ফাদিয়াকে কোলে নিয়ে স্ত্রী হাফিজা বেগম কফিনের ওপর লুটিয়ে পড়েন। এ সময় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শিশু ফাদিয়া। সুফিয়ানের পাঁচ বছর বয়সী আরেক মেয়ে ফারজানা কফিনের পাশে বসে ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকতে থাকে। আর মা মনোয়ারা বেগম ছেলের কথা বলতে বলতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সুফিয়ান ছিলেন বড়। তিনি জয়পুরহাট ৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন।
বিজিবির অন্য সদস্য মোহামঞ্চদ আলীকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী মনাকষা গ্রামে দাফন করা হয়েছে। দাফনের আগে সকালে গ্রামের মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাফর ইকবাল জানান, মোহাম্মদ আলীর মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে গ্রামে পাঠানোর কথা থাকলেও পরে সড়কপথে পাঠানো হয়। মোহামঞ্চদ আলী এক সন্তান রেখে গেছেন। বুধবার (দুর্ঘটনার দিন) তাঁর ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল।