বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে 'প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক', অনন্য এক শারমীন

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক নিচ্ছেন শারমীন। ছবি: সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক নিচ্ছেন শারমীন। ছবি: সংগৃহীত


বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন শারমীন আক্তার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ‘গোল্ড মেডেল’ পেয়েছেন। বাড়ির বউ গোল্ড মেডেল পেয়েছেন, তাও আবার বাংলার মতো কঠিন বিষয়ে, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা গর্ব করেই বলেন এ কথা। শারমীন জানালেন, রাজধানীর মিরপুরের বাসায় মেহমান এলেই আলমারি থেকে গোল্ড মেডেলটি বের করে দেখাতে হয়।

সম্প্রতি প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে শারমীন আক্তার হাসিমুখে যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন পাশেই ছিলেন তাঁর স্বামী সুফিয়ান মজুমদার। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুফিয়ান মজুমদার স্ত্রী সম্পর্কে বললেন, ‘পড়াশোনা করা অবস্থায় পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ে হয়। বাড়ির বড় বউ হিসেবে সংসার আর পড়াশোনা নিয়ে ও অনেক কষ্ট করেছে।’

শারমীন আক্তার চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন ২০১১ সালে। ২০১০-১১ সেশনের বাংলা বিভাগ ও কলা অনুষদের সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক শেষ করেন ২০১৫ সালে। তাঁর সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৫৮। ২০১৪-১৫ সেশনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। স্নাতকের ফলাফলের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৬’-এর জন্য মনোনীত হন। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন।

শারমীনের সঙ্গে সারা দেশের ২৬৫ জন স্নাতকে বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। শারমীন অনুষদভিত্তিক এ সম্মাননার জন্য মনোনয়ন পান গত বছরের এপ্রিলে। কয়েক বছর ধরেই প্রধানমন্ত্রী এ পদক দিচ্ছেন।

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পড়াশোনা করে শারমীন স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতেও সাফল্য ধরে রাখেন। তাঁর সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৫০। মেয়ে অরোরার বয়স বর্তমানে আড়াই বছর বয়স। শারমীন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

শারমীন বলেন, ‘বাংলা অনেক কঠিন বিষয়। বাংলায় পড়তে হবে ভেবে তা নিয়ে মন খারাপও ছিল। এসএসসি ও এইচএসসিতে পড়েছি বিজ্ঞান বিভাগে। চট্টগ্রাম কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন বিষয় ছিল রসায়ন। এক বছর ড্রপ দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। একমাত্র ভাইও তখন পড়তেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্সেই সাহিত্য, ভাষা, ব্যাকরণসহ বাংলার কঠিন কঠিন বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। একসময় পড়ায় মন দিই। তারপর এই মেডেল পেলাম। প্রথমে তো বিশ্বাসই হতে চায়নি যে বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বরের জন্য এ মেডেল পেয়েছি।’

শারমীনের আরেক বোন আছেন। তাঁর বাবা সরকারি কর্মকর্তা। মা গৃহিণী। অন্যদিকে, শ্বশুর-শাশুড়ি দুজনই শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। দুই পরিবারই শারমীনের সাফল্যকে উদাহরণ হিসেবে অন্যদের কাছে তুলে ধরেন।