দুটি ট্রাইব্যুনালকে একটিতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা

একাত্তরের মানবতা-বিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সংকুচিত করে একটিতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে সরকার। জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার পরপর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে পারে।
আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শীর্ষস্থানীয় মানবতা-বিরোধী অপরাধীদের বেশির ভাগের বিচারের কাজ শেষ হতে যাওয়ায় সরকার এই সিদ্ধান্তের কথা ভাবছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজ কমে গেলে ট্রাইব্যুনাল একটি হবে—এটাই স্বাভাবিক।’
গত ১৯ জানুয়ারি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষ না হবে, তত দিন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল চলবে। হয়তো পরিসর কমে যাবে, দুটো থেকে একটা হবে।’
তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি ট্রাইব্যুনাল করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। কারণ, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে। এই অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের কাজ আরও গতিশীল করা প্রয়োজন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত সংস্থার সহ-সমন্বয়ক এম সানাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের পাঁচ শতাধিক অভিযোগ তদন্ত সংস্থায় জমা হয়ে আছে, ১৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় একটি ট্রাইব্যুনাল কমানো হলে স্বাভাবিকভাবেই এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি হতে দেরি হবে। তবে ট্রাইব্যুনাল একটি না দুটি থাকবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত।
মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ প্রথম ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এক বছরের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-২ গত বছরের ২১ জানুয়ারি প্রথম মামলার রায় ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ওই রায়ে জামায়াতের সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় রায়ও আসে ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ১২ ডিসেম্বর রাতে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল-২ আরও চারটি মামলার রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, বিএনপি নেতা আবদুল আলীম এবং পলাতক আলবদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর রায়। রায়ে আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্যদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনাল-১ এ পর্যন্ত তিনটি মামলার রায় দিয়েছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-১ প্রথম রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এরপর দেওয়া দুটি রায়ে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
বর্তমানে প্রথম ট্রাইব্যুনালে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলার বিচার চলছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১-এ নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম ১৩ নভেম্বর শেষ হয়। এখনো রায় ঘোষণা হয়নি। কারণ, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেলে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য রয়েছে। আর ট্রাইব্যুনাল-২-এ জামায়াতের নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফের মৃত্যুতে তাঁর বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলাটির কার্যক্রম গত বুধবার সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নিজামীর বিরুদ্ধে মামলাটির রায় ঘোষণা বাকি থাকায় শিগগিরই ট্রাইব্যুনাল-১-এ চেয়ারম্যানের শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এই রায়ের পরই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।