'বন্দুকযুদ্ধে' তিনজন নিহত লাশ উদ্ধার একজনের

রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে গত দুই দিনে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান মো. সালাউদ্দিন (২৮) ও জুয়েল (২৭)। আর গত শুক্রবার সুন্দরবনের করমজল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন বনদস্যু সিরাজ বাহিনীর প্রধান সিরাজ শিকদার।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার আরও এক আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫)। পরিবারের দাবি, এক মাস আগে জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়েছিল।
যাত্রাবাড়ীতে ‘বন্দুকযুদ্ধ’: যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার ছনটেক নামক স্থানে সালাউদ্দিন, জুয়েলসহ তিনজনকে রিকশাযোগে যেতে দেখে পুলিশ। তাঁদের ধাওয়া দিলে ওই তিনজন দৌড়ে কাজলার নয়ানগর এলাকার দিকে চলে যান। তাঁদের মধ্যে সালাউদ্দিন ও জুয়েল একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাকি একজন পালিয়ে যান। পুলিশ স্থানীয় একজনের সহায়তায় বাড়িটি শনাক্ত করে। পরে পুলিশের আরও চারটি দল ওই বাড়িতে গিয়ে বাথরুম থেকে দুজনকে আটক করে।
ওসি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সালাউদ্দিন জানান, তাঁদের কিছু আগ্নেয়াস্ত্র যাত্রাবাড়ী থানার সুতী খালপাড়ের বালুর মাঠে আছে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ বালুর মাঠে গেলে সালাউদ্দিন ইটের সুরকির নিচে অস্ত্র আছে বলে জানান। পুলিশ অস্ত্র খুঁজতে গেলে সুরকিসংলগ্ন দেয়ালের অপর পাশ থেকে সালাউদ্দিনের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি করলে সালাউদ্দিন ও জুয়েলের শরীরে বিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, গুলিবিনিময়ের সময় গুলির স্পর্শ লেগে এবং হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়ে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আজম, প্রদীপ, ইদ্রিস, আসলাম এবং এক কনস্টেবল আহত হন। তাঁদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি রিভলবার ও তিনটি গুলি উদ্ধার করা হয়।
ওসি রফিকুল বলেন, নিহত সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় চারটি হত্যা মামলা, দুটি অস্ত্র মামলাসহ মোট আটটি মামলা আছে। ইতিমধ্যে দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সালাউদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি তাঁর সহযোগী হিসেবে জুয়েলের কথা উল্লেখ করেছেন। ওসি বলেন, সালাউদ্দিন গত ঈদুল ফিতরের আগের দিন জামিনে বের হয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন।
কাজলার নয়ানগরের কোন বাড়ি থেকে এ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের উত্তর তাৎক্ষণিকভাবে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি।
যাত্রাবাড়ী থানার উত্তর দিকে আঁকাবাঁকা গলি ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই সড়কের পাশে সুতী খালপাড় বালুর মাঠ। ওই খালপাড়ের গলি ও আশপাশে সব সময় যানবাহন এবং লোকসমাগম থাকলেও তুলনামূলকভাবে বালুর মাঠটি বেশ নির্জন। মাঠের বেশ কিছু অংশ সীমানাদেয়াল দিয়ে ঘেরা। কয়েকটি প্লট ফেলে একটু সামনের দিকে এগিয়ে দেখা যায়, নিচে পড়ে আছে ছোপ ছোপ রক্ত। ঘটনাস্থলের পাশে আসবাব তৈরির কারখানা। সড়ক ঘেঁষে সারিবদ্ধ দোকান।
কয়েকজন দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যার দিকে তাঁরা অনেকগুলো গুলির শব্দ শুনেছেন। গুলির শব্দের কিছুক্ষণ পর পুলিশের কয়েকটি গাড়ি আসে। এরপর দুটি লাশ নিয়ে যায়। ওই দুজনকে নিয়ে আসতে বা কাউকে পালিয়ে যেতে তাঁরা দেখেননি।
সুন্দরবনে ‘বন্দুকযুদ্ধ’: পুলিশ জানায়, গত বছরের ২৫ নভেম্বর খুলনার পাইকগাছা থানায় একটি ডাকাতি মামলার সন্দেহভাজন কয়েকজন আসামি ওই ডাকাতির সঙ্গে বাহিনীর প্রধান সিরাজ শিকদারের নাম প্রকাশ করেন। এরপর শুক্রবার ভোরে রামপালের তুজুলপুর গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে সিরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজ জানান, দাকোপ থানার সুন্দরবনের করমজল এলাকায় তাঁর বাহিনীর অস্ত্র রয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, সিরাজকে নিয়ে শুক্রবার বিকেলে পাইকগাছা থানার পুলিশ সুন্দরবনে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই সিরাজ নিহত হন। এতে আহত হন পুলিশের দুই সদস্যও। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি বন্দুক, দুটি পাইপগান, বন্দুকের ১০টি গুলি, চারটি দা ও একটি চায়নিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।
খুলনার পুলিশ সুপার গোলাম রউফ খান জানান, এ ঘটনায় দাকোপ থানায় মামলা হয়েছে।
আসামির লাশ উদ্ধার: গতকাল শনিবার সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ঝাউল সেতু এলাকা থেকে জাহাঙ্গীরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা সাইফুল হত্যা মামলার ১৮ নম্বর আসামি।
সিরাজগঞ্জে সাইফুল হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি বাবলু মিয়া গত ৩০ জানুয়ারি শহরের চায়না হারবারের নির্মিত বাঁধ এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। গুলি করে হত্যা করা হয় মামলার প্রধান আসামি জবান আলীকেও। ৬ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ-কড্ডা সড়কের কোনাগাতী এলাকায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। গত ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতা সাইফুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম জানান, সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের দেলা হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ডাকাতি, ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। ওসি জানান, লাশের পিঠ ও মাথার পেছনে মোট ছয়টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।
জাহাঙ্গীরের মা জয়গুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলেকে এক মাস আগে ঢাকার বোর্ডবাজার থেকে আটক করা হয়। সেই থেকে জাহাঙ্গীর নিখোঁজ ছিলেন।