বসন্তে বিরক্তির বৃষ্টি

ঋতুরাজ বসন্তের দেখা মিলতে না মিলতেই হঠাত্ বৃষ্টি পড়ছে দেশজুড়ে। গতকাল শনিবার রাত থেকে ঢাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কখনো সামান্য ভারী, কখনো-বা ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিশেষ করে শিশুরা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে আক্রান্ত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঋতুর পালাবদলের এ সময়ে পশ্চিমা লঘুচাপ হঠাত্ এই বৃষ্টির কারণ।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আজ রোববার কর্মব্যস্ত ঢাকার রাজপথকে কিছুটা অচল করেছে। বিশেষ করে, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরে মহানগরের যেসব এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, সেসব জায়গায় বৃষ্টি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

মিরপুরের কালশী রোড থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলার মধ্যে হঠাত্ এই বৃষ্টি মিরপুরবাসীকে আজ সকালে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলেছে। পথের দুই পাশ খোঁড়াখুঁড়ি করায় বৃষ্টিতে কাদা জমে গেছে। ফুটপাত তুলে ফেলায় হেঁটে চলাচল করা যাচ্ছে না।

সকাল আটটার দিকে পল্লবী থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত যেতে সময় লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা—এমন তথ্য দিয়েছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসতে রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ দিতে হয়েছে। এরপর মতিঝিলের বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা। কিন্তু বাসে চড়ে দেখি এর চাকা যেন ঘোরে না। জানি না কখন অফিসে পৌঁছাব।’

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ পুরোদিন এমন বৃষ্টি ঝরবে। তাই তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকবে। একটু শীত শীতভাব থাকতে পারে। বৃষ্টির জন্য দেশের গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে।
গত শুক্রবার থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি পড়েছে। তবে শনিবার এর মাত্রা বেশি ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ায় ২৫, চুয়াডাঙ্গায় ২৪ ও রাজধানী ঢাকায় ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে এভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া এখন ঋতুবদলের সময়। শীতের বদলে ঝোড়ো মৌসুম শুরু হবে। সব মিলিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৃষ্টির ভাব আজকের মধ্যে চলে যেতে পারে।’

শীত ও হঠাত্ বৃষ্টির কারণে, বিশেষ করে শিশুরা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে আক্রান্ত হচ্ছে। আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, একের পর এক শিশুকে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে চিকিত্সকেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান আবিদ হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, শীতে এমনিতেই শিশুদের ভোগান্তি ও রোগব্যাধি বেড়ে যায়। এ বছর শীতের শুরু থেকেই শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে রোগাক্রান্ত শিশুদের প্রাধান্য ছিল। আজও এই রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। বছরের অন্য সময়ও এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসের আক্রমণ হয়। তবে শীতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। রোগটা নিউমোনিয়া থেকে আলাদা। কিন্তু লক্ষণগুলো প্রায় এক। কোনো শিশু যদি কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বরে ভোগে, তাহলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে। শুরুতেই চিকিত্সকের পরামর্শ না নিলে রোগটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এ রোগের চিকিত্সা খুব একটা কঠিন নয়। শিশুকে সুস্থ রাখতে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ঘনঘন মায়ের দুধ খাওয়ানো।