উপযুক্ত সময়ে ঢাকাকে জলজটমুক্ত করতে বিশেষ কিছুই করেনি ওয়াসা

রাজধানীর রায়েরবাজার পুলপাড় এলাকায় কাটাসুর খালের মাটি পরিষ্কারের কাজ করছে ওয়াসা। ৪ মে দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর রায়েরবাজার পুলপাড় এলাকায় কাটাসুর খালের মাটি পরিষ্কারের কাজ করছে ওয়াসা। ৪ মে দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

উপযুক্ত সময়ে রাজধানীকে জলজটমুক্ত করতে বিশেষ কিছুই করেনি ঢাকা ওয়াসা। এখন ১৭টি খাল পুনঃখনন, নালা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। কিন্তু বর্ষার আগে এসব কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ বলেন, ওয়াসার এসব কাজের সুফল বর্ষার প্রথম দিকে পাওয়া যাবে না। খালগুলোতে বিপুল পরিমাণ ময়লা জমেছে। তা পরিষ্কার করতে সময় লাগবে। তবে কাজ শেষ করতে পারলে বর্ষার শেষ দিকে ভোগান্তি কিছুটা কমতে পারে। তাঁর মতে, খাল খনন ও নালা পরিষ্কারের কাজ মার্চ মাসের মধ্যে শেষ করা উচিত ছিল। সেটাই ছিল উপযুক্ত সময়।

উপযুক্ত সময়ে কেন কাজ করা গেল না, জানতে চাইলে ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বরাদ্দজনিত জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তাঁরা বলেন, এ কাজগুলো হয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের টাকায়। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। চলতি বছর মার্চের শেষে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়। খাল খননের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা। গত মাসে খাল খনন, নালা, বক্স কালভার্ট পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল ঠিকাদার নির্বাচনের কাজ শেষ হয়। কয়েকটি খালের খননকাজ শুরু হয়েছে। এখনো সব কাজের কার্যাদেশ হয়নি।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, পুনঃখননের তালিকায় থাকা খালগুলোর মধ্যে রয়েছে খিলগাঁও বাসাবো খাল, শাজাহানপুর ঝিল, মান্ডা খাল, হাজারীবাগ খাল, শাহজাদপুর খাল, কাটাসুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, জিরানী খাল, সেগুনবাগিচা খাল, রূপনগর খাল (প্রধান ও দুটি শাখাসহ), মহাখালী খাল, কল্যাণপুর ‘চ’ খাল, কল্যাণপুর ‘খ’ খাল, কল্যাণপুর ‘ঘ’ খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, বাউনিয়া খাল ও দেব-ধোলাই খাল। এ ছাড়া সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের জন্য ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে এবং ২৯০ কিলোমিটার পানিনিষ্কাশন নালা পরিষ্কারের কাজ চলছে।

সরেজমিনে গত শুক্রবার কাটাসুর খালের শুরুর অংশে (বটতলা) দেখা গেছে, এক্সকাভেটর যন্ত্রের মাধ্যমে খাল থেকে মাটি তুলে ট্রাকে রাখা হচ্ছে। খননকাজ তদারক করছেন মো. বাবুল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খালটির ১ হাজার ৫০০ মিটার খনন করা হবে। এ কে ইন্টারন্যাশনাল ও মাহি অ্যান্ড কোম্পানি নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননকাজের দায়িত্ব পেয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ১০ দিনে খালের ৫০ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। বৃষ্টিতে কাজ করতে সমস্যা হয় কি না, জানতে চাইলে মো. বাবুল হোসেন বলেন, একটু ভারী বৃষ্টি হলেই খনন করা জায়গায় মাটি এসে আবার আগের মতো হয়ে যায়। এ ছাড়া বৃষ্টির পানির কারণে এক্সকাভেটর যন্ত্র দিয়ে মাটি তোলা যায় না। তখন কাজ বন্ধ রাখতে হয়।

 ওয়াসার পরিচালক (কারিগরি) এ কে এম সহিদ উদ্দিন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির জন্য কাজের কোনো সমস্যা হবে না। প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে এবারই এমন বড় আকারে কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেগুনবাগিচা, কাটাসুর, রামচন্দ্রপুরসহ আটটি খালের খননকাজ শুরু হয়েছে। এ বছর জলজটের ভোগান্তি গত বছরের চেয়ে বহুলাংশে কম হবে।

তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, জলাবদ্ধতা গত বছর ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। গত সপ্তাহেও এর নমুনা দেখা গেছে। আগামী মাস থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হলে খাল খননের কাজ ঠিকভাবে করা সম্ভব হবে না। জনভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়ের আরও আগে বরাদ্দ বাড়ানো এবং ওয়াসার ঠিক সময়ে কাজ শুরু করা উচিত ছিল।