শিক্ষকের মাথায় মলমূত্র ঢেলে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

বরিশালে মাদ্রাসার অধ্যক্ষর মাথায় মলমূত্র ঢেলে দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিনজু ও বাদলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার কার্যালয়, বরিশাল, ১৪ মে। ছবি: সাইয়ান
বরিশালে মাদ্রাসার অধ্যক্ষর মাথায় মলমূত্র ঢেলে দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিনজু ও বাদলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার কার্যালয়, বরিশাল, ১৪ মে। ছবি: সাইয়ান

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের মাথায় প্রতিপক্ষ লোকজন মলমূত্র ঢেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ভিডিও গতকাল রোববার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মো. মিনজু, মো. বেল্লাল ও মো. মিরাজ হোসেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (সুপার) আবু হানিফের (৫০) মাথায় মলমূত্র ঢেলে উল্লাস করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ হয়।

মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনে অধ্যক্ষ এক সভাপতি প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় পরাজিত প্রার্থী ও তাঁর সহযোগীরা আবু হানিফের মাথায় মলমূত্র ঢেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

বিষয়টি নিয়ে আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন হয়। নির্বাচনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু হানিফ এক সভাপতি প্রার্থীর পক্ষ নেন। এর জের ধরে গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আবু হানিফ মসজিদ থেকে বের হলে তাঁকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁর মাথায় মলমূত্র ঢেলে দেয় পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তাঁর সহযোগীরা। অপদস্থকারীরা এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে। বিষয়টি কাউকে জানাতে চাননি অধ্যক্ষ। তবে অপদস্থকারীরা পরে এই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। ভিডিওটি ভাইরাল হলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে।

পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আবু হানিফ বিষয়টি ভুলে যেতে চেয়েছিলেন বলে জানান। পরে পুলিশের আশ্বাসে তিনি ওই ঘটনায় গতকাল বাকেরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পুলিশ গতকালই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিরা হলেন পরিচালনা পরিষদের পরাজিত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর খন্দকার, তাঁর সহযোগী জাকির হোসেন জাকারিয়া, মো. মাসুম সরদার, মো. এনামুল হাওলাদার, মো. রেজাউল খান, মো. মিনজু, সোহেল খন্দকার, মিরাজ হোসেন। তাঁরা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে জাহাঙ্গীর খন্দকার জাতীয় পার্টির স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।

আবু হানিফ লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে তিনি সভাপতি প্রার্থী এইচ এম মজিবর রহমানের পক্ষ নেন। নির্বাচনে মজিবর রহমান বিজয়ী হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন। এরপর থেকেই জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে (অধ্যক্ষ) বিভিন্ন সময় হুমকিধমকি দিয়ে আসছিলেন। সবশেষ গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর তিনি মসজিদ থেকে বের হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর পথ রোধ করেন। বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন তাঁর হাত ধরেন। অপর একজন তাঁর মাথায় মলমূত্র ঢেলে দেন। এ সময় উপস্থিত সবাই উল্লাস করেন। এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন তাঁরা।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি অনেক পরে শুনেছেন তিনি। সমাজের সম্মানিত পেশার একজন ব্যক্তিকে এভাবে কেউ অপমানিত করতে পারে, তা ভাবতেও তাঁর ঘৃণা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিষয়টি জানাতে চাননি। কিন্তু ভিডিও ফেসবুকে তুলে দেওয়ায় তা জানাজানি হয়েছে। আমরা গতকাল ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে।’