যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়, তখন বৃষ্টি

>
  • ২০১৫ সাল থেকে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে।
  • অথচ এর আগে এই সময় বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি একেবারেই এলোমেলো হয়ে উঠেছে। যখন বৃষ্টি শুরু হওয়ার কথা নয়, তখন বৃষ্টি হচ্ছে। আবার যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা প্রতিদিনই, তখন বৃষ্টি হচ্ছে না। যখন তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া স্বাভাবিক, তখন আবহাওয়া শীতল।
কালবৈশাখী হওয়ার কথা মাঝেমধ্যে, বড়জোর ১৫ দিনের সময়সীমায়। কিন্তু এখন তা হচ্ছে প্রতিদিন। কোনো কোনো দিন একাধিকবারও। সঙ্গে হচ্ছে অস্বাভাবিক সংখ্যায় বজ্রপাত। এ বছর এখন পর্যন্ত বজ্রপাত ছাড়া এক দিনও বৃষ্টি হয়নি। গত দুই সপ্তাহে সারা দেশে বজ্রপাতে অন্তত ১৪০ জন মারা গেছেন।

আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিকে বলছেন অস্বাভাবিক ও খামখেয়ালি (ইরাটিক)। এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলেও তাঁদের অভিমত। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ২০১৫ সাল থেকে এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। অধিদপ্তরেরই গবেষণায় পাওয়া তথ্য হলো, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরে এপ্রিল ও মে মাসে গড় বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম। আবার ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরেও বৃষ্টিপাতের ধরন একই রকম ছিল।

আবহাওয়া নিয়ে গবেষণায় অন্তত ৩০ বছরের তথ্য সন্নিবেশিত করার কারণ হলো, কোনো অঞ্চলের এ সময়ের প্রতিদিনের আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেটাই হচ্ছে ওই অঞ্চলের জলবায়ু। দেশে জলবায়ু নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার। বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটাকে মোটেই স্বাভাবিক বলা যায় না। ২০১৫ সাল থেকে এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। এ বছরের এপ্রিল মাসে এমন একটি দিনও যায়নি, যেদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাত হয়নি। মে মাসেও তা সমানে চলেছে।

বৈজ্ঞানিক কারণ ব্যাখ্যা করে সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, বঙ্গোপসাগরের ওপর বিরাজমান বায়ুর উচ্চ চাপবলয়টি অস্থিতিশীল। উচ্চাকাশে প্রবল গতিশীল জেট বায়ুর ঘূর্ণাবর্ত ভারতের বিহার, ওডিশা ও বাংলাদেশের ওপর থেকে সরছে না। এগুলো আবহাওয়ামণ্ডলের নতুন প্রবণতা। এ বছর এখনো কোনো তাপপ্রবাহ আসেনি। খুব একটা আসবে বলেও মনে হয় না। ফলে বৃষ্টিপাত চলতে থাকবে।

বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতিকে বলছেন খামখেয়ালি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণই হচ্ছে আবহাওয়ার ঘটনাগুলো (ঝড়, বৃষ্টি, গরম, শীত প্রভৃতি) তীব্র হয়ে ওঠা। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। এগুলো আরও তীব্র হবে।
আইনুন নিশাত বলেন, কালবৈশাখী যেমন বেশি হচ্ছে, তেমনি এর সময়কালও অস্বাভাবিক দীর্ঘ
হচ্ছে। এ বছরের ২ এপ্রিল সুনামগঞ্জের হাওরে উজানের বৃষ্টির পানি চলে এসেছে। অথচ এপ্রিলে তেমন কোনো বৃষ্টিই হওয়ার কথা নয়। এগুলো সবই জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। এখন পরিবর্তিত এই গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে তার সঙ্গে অভিযোজনের কাজটি গুরুত্বপূর্ণ।

গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা সামান্য বাড়তে পারে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি ও ছোট আকারের কালবৈশাখী অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে বিজলি চমকানোসহ বজ্রপাতের আশঙ্কাও রয়েছে।