ঢাকা দেখার উদ্দেশে বাড়ি থেকে পালানো দুই শিশু বাড়ি ফিরল

বগুড়া
বগুড়া

এক মাস ধরে ১০ ও ১২ বছরের নিখোঁজ দুই শিশুর সন্ধান চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেন উৎকণ্ঠিত বাবা-মা। বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে এক ব্যক্তি মুঠোফোনে বলেন, ‘শিশু দুটির খোঁজ তাঁর কাছে আছে। অপহরণকারী চক্র দুই শিশুর কিডনি খুলে নিয়েছে। একজন মারা গেছে, অন্যজন গুরুতর অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি আছে। এখনই অপারেশন করাতে হবে। বিকাশে দ্রুত পাঁচ হাজার টাকা না পাঠালে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।’

সন্তান হারিয়ে ব্যাকুল বাবা-মা সরল বিশ্বাসে ওই মুঠোফোন নম্বরে বিকাশ করে তখনই পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তারপর থেকেই মুঠোফোন বন্ধ। দিশেহারা বাবা-মা ভেবেছিলেন, তাঁদের হারানো শিশু দুটি মারা গেছে।

দেড় মাস পর আবারও বাবা-মায়ের কাছে অচেনা একজনের ফোন আসে। শিশু দুটিকে তিনি গাজীপুরের কোনাবাড়ীর একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতে দেখেছেন। ওই রেস্টুরেন্টের ঠিকানাও দেন তিনি। কৌতূহলী বাবা-মা ছুটে যান কোনাবাড়ীর সেই রেস্টুরেন্টে। সেখানে গিয়ে তাঁরা উদ্ধার করেন দুই শিশুকে। কিন্তু উদ্ধারের পর মামাত-ফুপুত ভাই ফরহাদ (১২) ও স্বাধীন (১০) বলে, কেউ তাদের অপহরণ করেনি। ঢাকা শহর দেখার কৌতূহল হয়েছিল তাদের। এ জন্য বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। বগুড়া থেকে ঢাকার বাসে রওনা দিয়েছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাকা দেখা হয়নি। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় তাদের।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নন্দগ্রাম উত্তরপাড়ার প্রান্তিক কৃষক বেলাল হোসেনের ছেলে স্বাধীন। আর ফরহাদ বগুড়া শহরের চকলোকমান এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বাবর আলীর ছেলে। গত ২ এপ্রিল নিখোঁজ হয় স্বাধীন ও ফরহাদ। পরে বেলাল হোসেন শাজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি(জিডি) করেন। বুধবার গাজীপুর থেকে বগুড়ায় আসার পর শাজাহানপুর থানা পুলিশকে শিশু দুটি উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

ফরহাদের বাবা বাবর আলী বলেন, উদ্ধারের পর ফরহাদ জানিয়েছে টেলিভিশনে ছবি দেখে তাদের ঢাকা শহর দেখার কৌতূহল জেগেছিল। এই কারণে ২ এপ্রিল কাউকে না জানিয়ে তারা একটি বাসে উঠে ঢাকায় পথে রওনা দেয়। কিন্তু গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে দুজনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলে ওই এলাকাতেই থেকে যায় তারা।

বাবর আলী বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন কোনো অপহরণকারী চক্র ফরহাদ ও স্বাধীনকে অপহরণ করেছে। এ জন্য দুজনের সন্ধান চেয়ে পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে ফাঁদ পাতে প্রতারক চক্র। শিশু দুটির কিডনি খুলে নেওয়া হয়েছে এমন মিথ্যে কথা বলেও পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এরপর শিশু দুটির ফেরার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু রাখে আল্লা মারে কে? বুধবার অবিশ্বাস্যভাবেই ফরহাদ ও স্বাধীন উদ্ধার হয়েছে। তারা উভয় ভালো আছে।

শিশু দুটি উদ্ধার হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানী দেখার কৌতূহল থেকে শিশু দুটি বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজে থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির সুযোগে প্রতারক চক্র ফাঁদ পেতেছিল। শিশু দুটি উদ্ধারের বিষয়টি তাদের পরিবার নিশ্চিত করেছে।