অ্যাসিডের উৎস খুঁজে বের করতে হবে: ভোলায় প্রতিবাদ সভায় বক্তারা

অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে প্রথম আলো সহায়ক তহবিল ও বন্ধুসভা। প্রেসক্লাব, ভোলা, ১৭ মে। ছবি: নেয়ামত উল্লাহ
অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে প্রথম আলো সহায়ক তহবিল ও বন্ধুসভা। প্রেসক্লাব, ভোলা, ১৭ মে। ছবি: নেয়ামত উল্লাহ

অ্যাসিড-সন্ত্রাসের ঘটনায় সম্পৃক্ত অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা, অ্যাসিডে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসা ও অ্যাসিড প্রাপ্তির উৎস খুঁজে বের করার দাবিতে ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। একই দাবিতে জেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বক্তারাও সোচ্চার হন।

প্রথম আলো সহায়ক তহবিল (ট্রাস্ট ফান্ড) ও ভোলা বন্ধুসভা আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হয় আইনশৃঙ্খলা সভা।

ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে খুশিয়া গ্রামের রাঢ়ি বাড়িতে গত সোমবার রাতে ভয়াবহ অ্যাসিড-সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে। ওই দিন ঘুমন্ত অবস্থায় দিনমজুর হেলাল রাঢ়ির মেয়ে তানজিম আক্তার মালা (১৬) ও মারজিয়ার (৮) শরীরে দুর্বৃত্তরা অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তাদের মা জান্নাতুল ফেরদৌসী বাদী হয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ সন্দেহজনক দুজনকে আটক করে। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম মো. ইউসুফ (২৩)।

শিশুদের মা জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, অ্যাসিডে তিনি ও তাঁর দুই মেয়ে ঝলসে গেছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তানজিম আক্তার মালা। তাঁর মুখমণ্ডল, দুই চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ঝলসে গেছে। তাঁদের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এনেছে। তিনি উন্নত চিকিৎসা ও প্রকৃত আসামিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি করেন।

বৃহস্পতিবার একই দাবিতে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভা করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। এ সময় বক্তব্য দেন সচেতন নাগরিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সফিকুল ইসলাম, ভোলা স্বার্থরক্ষা কমিটির সদস্যসচিব অমিতাভ অপু, নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব এস এম বাহাউদ্দিন, কোস্টট্রাস্টের সমন্বয়কারী জহিরুল ইসলাম, বন্ধুসভার সভাপতি মামুনুর রশিদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ভোলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। প্রতিদিন খুন, চুরি. ছিনতাই, ডাকাতি, আত্মহত্যা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ভোলায় অ্যাসিড-সন্ত্রাস হয়নি। আবার তা শুরু হয়েছে। ভোলায় চারপাশের নদীপথ দিয়ে মাদক আসছে। মাদক ও মুঠোফোন ব্যবহারের কারণে শিশু-কিশোর অপরাধ বাড়ছে। এসব অপরাধের মধ্যে উত্ত্যক্ত, বাল্যবিবাহ, চুরি-ছিনতাই, খুন ও অ্যাসিড-সন্ত্রাস রয়েছে। স্বর্ণকার লাইসেন্স না করে অ্যাসিড ব্যবহার করছে। ফলে অ্যাসিড সহজলভ্য হচ্ছে।

দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসক মিলনায়তনে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় একই বক্তব্য দেন ভোলার সুশীল সমাজ। তাঁরা ভোলার আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ অ্যাসিড-সন্ত্রাস হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁরা এর জন্য পুলিশ-প্রশাসনকেও দায়ী করেন।

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘পথেঘাটে সারা দিন স্কুল-কলেজের ছাত্ররা আড্ডায় মেতে থাকে। স্কুলছাত্রের হাতে মুঠোফোন। এটা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অ্যাসিড-সন্ত্রাস ঘটেছে প্রেমের কারণে। একই কারণে ইভ টিজিং ও বাল্যবিবাহ হচ্ছে।’

ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক আইনশৃঙ্খলা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘সারা দেশে এই ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অপরাধীরা অ্যাসিড কোত্থেকে পেল, কীভাবে পেল, কারা তা সরবরাহ করেছে—এটা খুঁজে বের করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। যাঁরা অ্যাসিড ব্যবহার করেন, তাঁদের সবার লাইসেন্স আছে কি না, সেটি খুঁজে বের করতে হবে।’

পুলিশ সুপার মোকতার হোসেন বলেন, ‘এপ্রিল মাসে মাদকের মামলা বেড়েছে, অন্য মামলা কমেছে। পারিবারিক সহিংসতাও বেড়েছে। তবে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সঙ্গে অপরাধী গ্রেপ্তার হচ্ছে। পুলিশ কঠোর পরিশ্রম করছে। অ্যাসিড নিক্ষেপকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য বহুমুখী গোয়েন্দা নিয়োগ করা রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না।’