ঠিকাদারের ওপর ঠিকাদারি

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মালামাল কেনার জন্য নির্বাচিত ঠিকাদারের ব্যাংক হিসাব থেকে পুলিশের তিন কর্মচারী প্রায় অর্ধকোটি টাকা উত্তোলন করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুলিশের কর্মচারীরা নিজেরাই মালামাল কিনেছেন। পরে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

মহানগর পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, পুলিশের বার্ষিক মালামাল কেনার জন্য দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচিত করা হয়। পরে চাহিদা মোতাবেক ওই ঠিকাদার মালামাল সরবরাহ করেন। সরবরাহকৃত মালামালের জন্য তিনি বিল করেন। কর্তৃপক্ষ চেকের মাধ্যমে সেই বিলের টাকা পরিশোধ করে থাকে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে মহানগর পুলিশের মালামাল সরবরাহের জন্য আলফাজ উদ্দিনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। এই ঠিকাদারের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব থেকে পুলিশের তিন কর্মচারী ৪৮ লাখ ৬২ হাজার ১৭১ টাকা তুলে নিয়েছেন। তাঁরা হলেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কার্যালয়ের পিয়ন আজিজুল হক ও ফিরোজ হোসেন এবং প্রধান সহকারী মনিরুল ইসলাম।

গত ২৮ এপ্রিল প্রথম আলোতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের ‘পত্রিকা নকল করে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে মালামাল ক্রয়ের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ছাপানো পত্রিকাটি শুধু পুলিশের ফাইলেই ছিল। বাজারের কোনো খবরের কাগজে ছিল না। শুধু রাজশাহী মহানগর পুলিশের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ রকম তিনটি জাতীয় দৈনিকের কপি পাওয়া গেছে, যেখানে কেনাকাটার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ছাপা রয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজশাহী মহানগর পুলিশ তাদের বার্ষিক কেনাকাটার কাজ করেছে।

ঠিকাদারের ব্যাংক বিবরণীতে আজিজুল হকের নাম চার রকম করে লেখা হয়েছে। অবশ্য এই কর্মচারী বলেছেন, তাঁর নাম আজিজুল হক। আর বাকি দুজন মনির ও ফিরোজ নামে টাকা তুলেছেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আলফাজ উদ্দিনের লাইসেন্স ব্যবহার করে মহানগর পুলিশের কর্মচারীরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেরা মালামাল কিনেছেন। পরে বিল তৈরি করে টাকা নিজেরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

ব্যাংকের বিবরণী দেখে জানা যায়, প্রধান সহকারী মনিরুল ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। পিয়ন ফিরোজ ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর তুলেছেন ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা।

মনিরুল বলেছেন, আলফাজ উদ্দিন রাজশাহী মহানগর পুলিশের ঠিকাদার। তাঁর মাধ্যমে ঠিকাদারি মালামাল কেনার জন্য আলফাজ উদ্দিন তাঁকে (মনির) এই টাকা দিয়েছেন। তবে ফিরোজ টাকা উত্তোলন করার কথা অস্বীকার করেন।

ঠিকাদার আলফাজ উদ্দিনের দুটি হিসাব নম্বর থেকে আজিজুল হক সবচেয়ে বেশি টাকা তুলেছেন। আজিজুল মোট ৩৯ লাখ ৪ হাজার ১৭১ টাকা তুলেছেন। আজিজুল রহমান নামে ২০১৬ সালে তুলেছেন ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে তুলেছেন বাকি টাকাটা।
আজিজুল বলেন, তিনি আলফাজ উদ্দিনের ব্যাংক হিসাব থেকে কোনো টাকা উত্তোলন করেননি।

ঠিকাদার আলফাজ উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী মহানগর পুলিশের সঙ্গে আমার এখনো ঠিকাদারি রয়েছে। আমাকে কোট করে কিছু না বলাই ভালো।’ পরে ব্যাংক বিবরণীর কথা শুনে তিনি বলেন, তাঁর সরবরাহকৃত মালামাল খারাপ হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুলিশের লোক নিজেরাই মাল কিনেছে। পরে তাঁকে বিল দিয়েছে।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরীর বরাত দিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, আলফাজ উদ্দিন তাঁদের ঠিকাদার। নিয়ম অনুযায়ী তাঁরই মালামাল সরবরাহ করার কথা। তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুলিশের মাল কেনার নিয়ম নেই। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।