খুলনা সিটি নির্বাচন কারসাজিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না

সুজন
সুজন

খুলনার নির্বাচন স্বচ্ছ, কারসাজিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। কারণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেননি। উল্টো সিল-সইবিহীন ব্যালটকে বৈধ ভোট হিসেবে গণনা করা হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘খুলনা সিটি নির্বাচন-২০১৮, বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন এবং সুজনের দৃষ্টিতে নির্বাচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আজ মঙ্গলবার এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিজয়ী হয়েছেন। তবে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করে ১০০টি কেন্দ্রে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজন বলেছে, বড় ধরনের কোনো অঘটন ও সহিংসতা দেখা না গেলেও নির্বাচনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, অনেক কেন্দ্রে বিএনপির কোনো এজেন্ট ছিল না। কোথাও কোথাও কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সামনে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকেরা জটলা পাকিয়ে সাধারণ ভোটারদের ভোটদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এ ছাড়া ভোটের আগে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করায় অনেকে ভয়ে ভোট দিতে যাননি।

লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এতে আরও বলা হয়, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকালে ইসির কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের চড়াও হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যা নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর সিটিসহ কয়েকটি ভালো নির্বাচনের পর খুলনায় অস্বচ্ছ ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।

সুজনের পর্যবেক্ষণে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা বিধিবিধান অনুসরণ করে দায়িত্বপালন করেননি। অনেক কেন্দ্রে ব্যাপক গোলযোগ হলেও ইসি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ নির্বিকার থেকেছে।

এসব বিষয়ে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাঁরা প্রার্থীদের হলফনামা সঠিকভাবে যাচাই করেনি। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিষ্ক্রিয় করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সব মিলিয়ে ইসি ব্যর্থ হয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আসলে সরকার যা বলেছে, ইসি তা-ই করেছে। তাই বিএনপি যেসব অভিযোগ করেছে, তার তদন্ত হওয়া উচিত।

প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, খুলনার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। শিশুরা ভোট দিয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে খুলনার নির্বাচন ছিল ইসির জন্য পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় তারা তৃতীয় বিভাগ পেয়েছে। তাই সাধারণ নির্বাচনে যে তারা প্রথম বিভাগে পাস করবে, সেটা দেশের মানুষ আর বিশ্বাস করে না।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, খুলনার নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ অনিয়ম হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ কর্মকর্তাদের ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বরং মাঠপ্রশাসন রাজনৈতিক কর্মীদের হুকুমে চলেছে। ভোটের আগে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। যে কারণে ভোটাররা মানসম্মান রক্ষা করতে গিয়ে ভোট দিতে যায়নি।