'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত আরও ১০

দেশজুড়ে র‍্যাব ও পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে গতকাল শনিবার রাতে ১০ জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলেছে, তাঁদের মধ্যে মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন দুজন। বাকি ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন পুলিশের সঙ্গে ও একজন র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এ নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর ১৩ দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ৯১। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, তাঁদের ৮৪ জনই মাদক ব্যবসায়ী। গতকাল রাতের বন্দুকযুদ্ধের পর দু-একটি ছাড়া প্রতিটি ঘটনাস্থল থেকেই ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করার হয় বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলেছে, ১৭ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত নয় দিনে সারা দেশে পুলিশের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে মাদক ব্যবসায় জড়িত অভিযোগে সাত হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ১৫ লাখ ইয়াবা, ২ হাজার কেজি গাঁজা, ১৭ কেজি হেরোইন, ১৩ হাজার বোতল ফেনসিডিল ও ১ হাজার ১০০ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়। মাদক বহনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা হয়েছে।

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

মেহেরপুর: গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাথানমাঠে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে হাফিজুর রহমান ওরফে হাফিজ (৪৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে হাফিজুরের লাশ পায়। পুলিশের দাবি, হাফিজুর একজন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন। গাংনী থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদকের দুই ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহ: ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ময়মনসিংহে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ডিবির ভাষ্য, মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ভাগাভাগি করছেন—এমন খবরের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালায়। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার টহল পুলিশও। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময় হয়। কিছুক্ষণ পর মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞাত একজনকে পাওয়া যায়। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময়ের ঘটনায় হুমায়ুন ও আমির হামজা নামে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

ঝিনাইদহ: শৈলকুপার বড়দাহ জামতলায় ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে। তাঁর নাম রফিকুল ইসলাম ওরফে গাঁজা লিটন। পুলিশ বলেছে নিহিত ব্যক্তি চিহ্নিত গাঁজা ব্যবসায়ী ছিলেন। দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে গাঁজা লিটন নিহত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শৈলকুপাসহ পার্শ্ববর্তী থানাগুলোয় ১২টি মাদক মামলা রয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজনের ভাষ্য, রাত একটার পর তাঁরা হঠাৎ করে গুলির শব্দ শুনতে পান। এরপর তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে বড়দাহ জামতলায় রাস্তার পাশে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

চাঁদপুর: মতলব দক্ষিণে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. সেলিম (৩৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য, নিহত ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। গতকাল রাত তিনটার দিকে মতলব দক্ষিণ থানা ও ডিবি পুলিশের একটি যৌথ দল চাঁদপুরের মতলব সড়কের হাজীর ডোন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে। কিন্তু সহযোগীরা তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময় হয়। এ সময় সেলিম গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে মতলব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সেলিমের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সাতটি মামলা রয়েছে।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কুতুব উদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় তাঁদের চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও: রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের দুর্লভপুর এলাকার মহারাজা সড়কে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হন। তাঁর নাম রফিকুল ইসলাম ওরফে তলেবান (৫১)। পুলিশ বলেছে, তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। পুলিশের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাদক ব্যবসায়ী মাদকদ্রব্য লেনদেন করছেন—এমন খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালালে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময় হয়। এতে রফিকুল মারা যান। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে আটটি মামলা রয়েছে।

কক্সবাজার: টেকনাফে র‌্যাবের সঙ্গের বন্দুকযুদ্ধে মো. একরামুল হক নামের এক এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং টেকনাফ বাসস্টেশন বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি ছিলেন। র‍্যাব বলছে, একরামুল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবার গডফাদার ছিলেন।

গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফ উপজেলা সদর ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়ার টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে এ ঘটনা ঘটেছে।

বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিতলমারীতে পুলিশের থাকে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে মিটুল বিশ্বাস (৪৫) নামেন এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য, মিটুল মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন থাকায় ১৯টি মামলা রয়েছে। গতকাল রাতে চিতলমারী উপজেলার চিংগুড়ি গ্রামে বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে।

চিতলমারী থানার ওসি অনুকূল বিশ্বাস বলেন, গতকাল রাতে উপজেলার কুনিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মিটুলকে আটক করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁকে নিয়ে চিংগুড়ি গ্রামে অভিযান চালালে তাঁর সহযোগীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এ সময় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি গুলিতে মিটুলের মৃত্যু হয়।

কুষ্টিয়া: গতকাল রাত একটার দিকে শহরের হাউজিং ডি ব্লক এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হালিম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিনের ভাষ্যমতে, মাদকের একটি চালান হাউজিং ডি ব্লক দিয়ে যাচ্ছে—এমন খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশসহ যৌথ একটি দল সেখানে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি চালান। পুলিশও গুলি ছোড়ে। পরে সেখানে এক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে থাকে। বাকিরা পালিয়ে যায়।

ওসিও জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তির নাম হালিম। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বরিয়া গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

চট্টগ্রাম: সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী বেড়িবাঁধ স্লুইসগেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ী রায়হান উদ্দিন ওরফে রেহান (২৮) নিহত হয়েছেন। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় রায়হানের আরও তিন সহযোগীকে। পুলিশের দাবি, এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হয়েছেন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

নিহত রায়হান এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে আটটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন উপজেলার পূর্বভাটেরখীলের তিন মামলার আসামি জাফর আহম্মদ (২৭), মোহাম্মদ সুমন ওরফে কালা সুমন (২৫) ও দক্ষিণ পশ্চিম সৈয়দপুরের ইউছুফ টিটু (২৫)।

নোয়াখালী: সোনাইমুড়ী উপজেলার বগাদিয়া এলাকায় পুলিশের পরিচালিত মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম মো. হাছান ওরফে ইয়াবা হাছান (৩৫)। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে ২১টি মামলা রয়েছে। তিনি থানার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন।

গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বগাদিয়া এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন গোলাম সামদানী, জহির মজুমদার ও মো. সোহাগ। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।