মাদক বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থসম্পদ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে যাবে

>
  • মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
  • সব বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। 
  • মাদক ব্যবসায়ী-মাদকাসক্তদের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হবে।

মাদক বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থসম্পদ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। মাদক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, মদদদাতা, সাহায্যকারী ও অর্থায়নকারীদের বেলায় এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন করা হবে।

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা কর্মপরিকল্পনায় এসব কথা বলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সব বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি জেলা, উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্ত ব্যক্তির তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হবে।

কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ক্ষুদ্রাস্ত্র নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিপাহি থেকে পরিদর্শককে অস্ত্র প্রদানের বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য মেডিকেল পরীক্ষায় মাদকাসক্তির (ডোপ টেস্ট) বিষয়টি যুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও পর্যায়ক্রমে এটি প্রয়োগ করা হবে।

কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী বা উপপরিচালকের শূন্য পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। তাঁদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক জেলায় দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য নিয়োগ করা হবে।

মাদক ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কট করার কথা উল্লেখ করে কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আন্তবাহিনী সমন্বয়ের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করতে হবে। কমপক্ষে তিনটি এলাকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের ‘এ’ ক্যাটাগরি, দুটি তালিকায় নাম থাকলে ‘বি’ ক্যাটাগরি ও অন্যদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

কর্মপরিকল্পনা অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ) মো. আতিকুল হক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানের পাশাপাশি দেশকে মাদকমুক্ত করতে এই কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আসক্ত ব্যক্তিদের সমাজে পুনর্বাসন করে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা ও সমাজকে মাদকমুক্ত করতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ওষুধের জন্য ব্যবহার করা মাদকজাতীয় কাঁচামালের যাতে অপব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযানে সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন, বিচারালয়সহ সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

এতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে ‘ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি’ হিসেবে রূপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। দেশের ভেতরে মাদকের অবৈধ উৎপাদন, সরবরাহ ও সহজলভ্যতা বন্ধ করতে হবে। নৌপথে মাছ ধরার নৌকাগুলোকে ভিন্ন রং করা এবং মিয়ানমারের নৌকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করে এসব কমিটির কার্যক্রম মন্ত্রণালয়কে জানানোর কথা কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়।

কর্মপরিকল্পনায় নিরাময়কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, বেসরকারি কেন্দ্রগুলোকে তদারকির মধ্যে আনতে হবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় প্রতিটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট মাদকাসক্তি চিকিৎসা ওয়ার্ড চালুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি সকলের সহযোগিতা নিয়ে আমরা এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমরা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।’