চলনবিলে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০

চলনবিল এলাকার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার প্লাবন ভূমিতে বাঁধ নির্মাণ শুরু করায় স্থানীয় লোকজন ও এনজিও সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাঁধ নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত এক্সোবেটরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে।

খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলনবিল এলাকার তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠের প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী মো. রফিকুল ইসলাম মাস্টার ‘শিসিউক’ নামের একটি এনজিওকে ব্যবহার করে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করে। বৃহস্পতিবার বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে জমির মালিকসহ এলাকার লোকজন এসে বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে এলাকাবাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের দশজন আহত হয়েছেন।

এলাকাবাসীর দাবি, রফিক মাস্টারের লোকজনের অস্ত্রের আঘাতে সান্দুরিয়া গ্রামের ফারুক হোসেন (৩২), জাহাঙ্গীর হোসেন (২৫), আতিকুল ইসলাম (২৪) গুরুতর আহত হন।

প্রতিরামপুর গ্রামের মাহাতাব উদ্দীন, ধাপটেতুলিয়া গ্রামের সেকেন্দার আলী, লাবু মিয়া, সান্দুরিয়া গ্রামের আরিফুল মেম্বার, লালচান আলীসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকাটি বিস্তীর্ণ প্লাবন ভূমি, কয়েক হাজার একর জমি রয়েছে। আমাদের নিজস্ব এক শ একরের বেশি জমি রয়েছে। প্রতি বছর তিনটি ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্ষায় প্রচুর পানি থাকে। এই চলনবিলের মাঝখানে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ করলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এলাকার হাজার হাজার কৃষক আবাদ থেকে বঞ্চিত হবে। এলাকার প্রভাবশালী রফিক মাস্টার ‘শিসিউক’ নামের একটি এনজিওর নাম ভাঙিয়ে মাছ চাষ করার পরিকল্পনা করায় এলাকার জমির মালিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আমরা এই অবৈধ বাঁধ নির্মাণের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে রফিক মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষের নিয়ম রয়েছে। যে কারণে এনজিওর সহযোগিতায় আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের পরিকল্পনা করি। এই কাজের জন্য সদস্যও সংগ্রহ করা হয়। এলাকার কিছু লোক চাঁদা চাইলে না দেওয়ায় তাঁরা বাঁধ নির্মাণে বাধা দিয়েছে। এই বাঁধটি স্বল্প উচ্চতায় করা হবে। বন্যার সময় পানি বাঁধের ওপর দিয়ে চলে যাবে। বন্যার সময় দুই থেকে তিন মাস যে সময় পাওয়া যাবে সেই সময়ে মাছ চাষ করা হবে। এতে সরকারের এবং এলাকার সকলেরই উপকার হবে। বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করতে গেলে সন্ত্রাসীরা আমার এক্সোবেটর যন্ত্রটি আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। উভয় পক্ষই এলাকা থেকে বাইরে অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা করতে আসেনি।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম ফেরদৌস ইসলাম জানান, মাছ চাষের বিষয়ে এনজিওর অনুমোদন নেই। তা ছাড়া অধিকাংশ এলাকাবাসী মাছ চাষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে বাঁধ নির্মাণ আপাতত বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নজরদারি রাখা হচ্ছে।