চাঁদপুরে টার্কি খামারে মা-মেয়ের সচ্ছলতা

টার্কিকে খাবার দিচ্ছেন মমতাজ বেগম। গতকাল বুধবার মতলব দক্ষিণ উপজেলার দিঘলদী গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
টার্কিকে খাবার দিচ্ছেন মমতাজ বেগম। গতকাল বুধবার মতলব দক্ষিণ উপজেলার দিঘলদী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস। টেলিভিশনে টার্কি পাখির ওপর একটি অনুষ্ঠান দেখছিলেন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দিঘলদী গ্রামের মমতাজ বেগম ও তাঁর মেয়ে মুক্তা আক্তার। অনুষ্ঠানটি দেখে মা-মেয়ে দুজনে সিদ্ধান্ত নেন টার্কির খামার করবেন।

গত বছরের অক্টোবরে নিজেদের বাড়িতে ১২ বর্গফুট জায়গার ওপর কিছু টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন টার্কি পাখির খামার। তাঁরা এর নাম দেন ফ্যামিলি টার্কি হাউস। টাঙ্গাইলের হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১০০টি টার্কির বাচ্চা কিনে ওই খামার শুরু করেন।

সম্প্রতি ওই খামারে গিয়ে সাদা ও সাদা-কালো রঙের টার্কি দেখা যায়। এগুলো অনেকটা ময়ূরের মতো। খামারের একটি কক্ষে এগুলোকে খাবার দিচ্ছেন মমতাজ ও মুক্তা। কিছু লোকের ভিড়ও চোখে পড়ে সেখানে।

মুক্তা আক্তার বলেন, খামারটি দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টার্কি, ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করেন। ছয় মাসে একেকটি পুরুষ টার্কি ৭ থেকে ৮ ও স্ত্রী টার্কি ৩ থেকে ৪ কেজি ওজন হয়। এক বছর পর সেগুলো যথাক্রমে ১২ থেকে ১৫ ও ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের হয়। প্রতি কেজির পাইকারি দর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

মুক্তা বলেন, তাঁদের খামারে উৎপাদিত প্রতিটি এক দিনের বাচ্চা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেন। ১৫ দিনের প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি করেন ৫০০ টাকায়। প্রতিটি ডিমের দাম ১০০ টাকা। তাঁদের এলাকা ছাড়াও চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলার লোকেরা এসব ডিম, বাচ্চা ও টার্কি কেনেন।

পুরুষ টার্কির চেয়ে স্ত্রী টার্কির দাম ও চাহিদা বেশি। খাওয়ার পাশাপাশি বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিম কিনে নেন ক্রেতারা। টার্কি মুরগির ডিম ও মাংস নরম, সুস্বাদু ও ভিটামিনসমৃদ্ধ। এ কারণে ডিম ও মাংসের দাম দেশি জাতের মোরগ-মুরগি ও ডিমের চেয়ে বেশি।

মমতাজ বেগম বলেন, প্রতি মাসে খামারে উৎপাদিত আট-নয় শ টার্কির বাচ্চা বিক্রি করেন। গত প্রায় আট মাসে ডিম, বাচ্চা ও টার্কি বিক্রি করে প্রায় ছয় লাখ টাকা আয় হয়েছে। বর্তমানে তাঁদের খামারে সাত শতাধিক টার্কি রয়েছে। এগুলো সব ধরনের খাবার খায়। ঘাস বা সবুজ পাতাও খায়। সহজে রোগে আক্রান্ত হয় না। অকালে মারাও যায় না তেমন।

তাঁরা দুজন বলেন, এ খামার করে তাঁরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। স্বামী বা বাবার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেরাই একটা কিছু করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এতে তাঁরা খুশি। তাঁদের দেখাদেখি আশপাশের বেশ কয়েকজন নারীও টার্কির খামার করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন।

সমস্যা ও সম্ভাবনা

মুক্তা আক্তার বলেন, আরও বড় আকারের খামার তৈরি করার ইচ্ছা আছে তাঁদের। এতে নিজেদের এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকায় মাংস ও ডিমের চাহিদা মেটানো যাবে। রপ্তানিও করা যাবে বিদেশে। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের সহায়তা পেলে তাঁদের সে স্বপ্ন পূরণ হবে।

মুক্তা বলেন, তাঁদের এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং থাকে। সব সময় ইনকিউবেটর (ডিম ফোটানোর মেশিন) চালাতে পারেন না। বাচ্চা ফোটাতে ঠিকমতো তাপ দিতে না পারায় গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ডিম নষ্ট হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, টার্কির মাংস নরম, চর্বিমুক্ত ও প্রোটিনসমৃদ্ধ। তিনি ওই খামারের কথা জেনেছেন। এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।