রাঙামাটির পাহাড়ে অবৈধ বসতি নির্মাণ চলছেই

রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা নতুন বসতি। গত শনিবার সকালের ছবি। গত বছরের এই দিনে এখানে পাহাড়ধসে কয়েকজন হতাহত হয়।  সুপ্রিয় চাকমা
রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা নতুন বসতি। গত শনিবার সকালের ছবি। গত বছরের এই দিনে এখানে পাহাড়ধসে কয়েকজন হতাহত হয়। সুপ্রিয় চাকমা
>
  • রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের এক বছর
  • নির্মিত হয়েছে আরও ২০০ ঘর 
  • ঝুঁকিপূর্ণ ৩১ স্থান
  • জেলা প্রশাসনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি

রাঙামাটি শহরের পাহাড়ে অবৈধ বসতি নির্মাণ চলছেই। এক বছরের মধ্যেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ১২টি পাহাড়ে নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক নতুন ঘর। এই পাহাড়গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ভারী বৃষ্টিতে এসব ঘর বিধ্বস্ত হয়ে নতুন করে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আজ ১৩ জুন। গত বছরের (২০১৭) এই দিনে পাহাড়ধসে রাঙামাটিতে ১২০ জন নিহত হয়। রাঙামাটির সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। ঝুঁকির মুখে পড়ে সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু স্থাপনা।

পাহাড়ধসের ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত অনুসন্ধান কমিটি স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। কিন্তু এক বছরেও এ সুপারিশের বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। ঘরহারা মানুষদের মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশজন এখনও চারটি আশ্রয়কেন্দ্র ও তাঁবুতে বাস করছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।

নতুন করে বসতি
রাঙামাটি শহরের নতুন পাড়ার বাসিন্দা মো. ইসমাইল হোসেন। গত বছরে ১৩ জুন সকালে ভয়াবহ পাহাড়ধসে তাঁর ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। সেই বিধ্বস্ত স্থানে আবার নতুন ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন ইসমাইল। একই এলাকার মিনারা বেগমও নতুন করে ঘর তুলে বাস করছেন। সেবার পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত হয়েছিল তাঁর ঘরটিও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড়ধসের ঘটনার কয়েক মাস পর থেকেই নতুন করে ঘর নির্মাণ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দুই শতাধিক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৭ পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির উদ্যোগে এসব ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। তবে এ ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য পৌরসভার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। শিমুলতলী, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, রূপনগর ও ভেদভেদী এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নতুন করে অবৈধ ঘর নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।

নতুনভাবে ঘর নির্মাণ করেছেন শিমুলতলী এলাকার মো. আবদুল মান্নান ও রূপনগরের মো. নুরুল ইসলাম। জানতে চাইলে দুজন প্রথম আলোকে বলেন, যেসব মানুষ বাড়িঘর নির্মাণ করে বসতি করছেন, কারোই বৈধ কাগজপত্র নেই। মূল শহরে বসবাসের কোনো সুযোগ নেই, তাই ঝুঁকি জেনেও থাকতে হচ্ছে এখানে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পৌরসভায় ১৭ হাজার ৭৬৭টি হোল্ডিং (ঘর) রয়েছে। একটি হোল্ডিংয়ের অধীনে কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। এর মধ্যে শুধু ২ হাজার ১৫টি হোল্ডিং অনুমোদিত। বাকি ১৫ হাজার ৭৫২টি অবৈধ। অবৈধ এসব বসতিগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও সরকারি খাস জায়গা বলে জানা যায়।

তবে অননুমোদিত হোল্ডিংয়ের সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। শহরের ১২টি পাহাড়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এসব পাহাড়গুলো পড়েছে পৌর এলাকায়। ১২ পাহাড়ে ১০ হাজার ৩৪৪ জন মানুষ রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়।

ঝুঁকিপূর্ণ ৩১ স্থান
ওই ১২টি পাহাড়সহ শহরে ৩১টি স্থান জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিত করে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে। পাহাড়গুলো হলো নতুনপাড়া, শিমুলতলী, রূপনগর, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, বিএডিসি কলোনি, পোস্ট অফিস কলোনি, উলুছড়া, আলুটিলা, কিনামনিঘোনা, মোনতলা, যুব উন্নয়ন এলাকা ও মোনঘর আবাসিক এলাকা। বৃষ্টির সময় জেলা প্রশাসন থেকে বারবার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা বেশি হওয়ায় উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। তবে কীভাবে উচ্ছেদ করা হবে তা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি
রাঙামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের পর ‘ভূমিধসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক অনুসন্ধান কমিটি’ স্বল্প, দীর্ঘ এবং মধ্যমেয়াদি বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। সুপারিশগুলোর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা রক্ষায় প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ, নতুন করে বসতি স্থাপন বন্ধ করা, পুনর্বাসন, পাহাড় কাটা বন্ধ করা উল্লেখযোগ্য। অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যার অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সুপারিশের দৃশ্যমান কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।