সড়কে নৌপথের যাত্রীদের বিড়ম্বনা

ঈদ উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই সদরঘাট টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু সদরঘাটে পৌঁছাতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন যাত্রীরা। টার্মিনাল এলাকা আর সড়কপথের যানজট ভুগিয়েছে সবাইকে।

আজ বৃহস্পতিবার সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াইজঘাট ও বাদামতলী এলাকায় টার্মিনালের পন্টুন ও আশপাশের সড়কগুলোতে হকাররা ফল, রুটি, বিস্কুট ও খাবারের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। এ ছাড়া সড়কে যত্রতত্র যানবাহন পার্কিংয়ের কারণে সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোর ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় ছিল প্রচুর। দুপুর ১২টার পর আবারও যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। বেলা তিনটা নাগাদ যাত্রীদের ভিড় বাড়ার কারণে পন্টুনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়েছে ৭৯টি। সকাল থেকে ছেড়ে যাওয়া বেশির ভাগ লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ছিল।
ভোর থেকে বরগুনা, আমতলী, ঘোষেরহাট, ঝালকাঠি, ভোলা, হাতিয়াসহ বেশ কয়েকটি রুটের যাত্রীরা লঞ্চ ছাড়ার প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা আগেই লঞ্চে উঠে ডেকে বসে থাকেন।
ধানমন্ডি থেকে আসা বিলকিস বেগম জানান, ফারহান-৭ লঞ্চে যাবেন। সেটি ছাড়ার কথা রাত পৌনে আটটায়। তিনি যাবেন ঝালকাঠি। কিন্তু ১১টার মধ্যেই তিনি সদরঘাটে এসে হাজির হয়েছেন। এত আগে আসার কারণ জানতে চাইলে বিলকিস বললেন, ‘ঢাকার রাস্তায় যে জ্যাম। ঠিকমতো আসতে পারব কি না কে জানে। এরপর শুনছি, যাত্রী ভরলেই লঞ্চ ছাইড়া দ্যায়। কোনো টাইম-টেবিল নাই।’
বিলকিস বেগম আরও জানান, ঢাকার রায়সাহেব মোড় ও সদরঘাটে যানজটে পড়তে হয়েছে তাঁকে। তারপরও আসতে পেরে খুশি। ঈদে বাড়ি ফেরা বলে কথা। তাই কোনো ঝুঁকি নেননি তিনি। পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ফারহান-৭ লঞ্চের ডেকে বসে আছেন।

বিলকিস বেগম যেমনটা বলছিলেন, আজ সদরঘাটে তেমনটাই ঘটছে। শুধু যাত্রী পূর্ণ হলেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে লঞ্চগুলো। বলা যায় বাধ্য করা হচ্ছে। সদরঘাটে যাতে কোনো ধরনের লঞ্চ জট তৈরি না হয়, সে জন্যই এ তৎপরতা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের।

মাদারটেক থেকে আসা ইমরান হোসেন জানান, বরগুনা যাবেন। সদরঘাটে আসতে গিয়ে সদরঘাট এলাকায় যানজটে পড়তে হয়েছে। লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটায়। এরপরও যাত্রা ‘নিশ্চিত’ করতে আগাম চলে আসা। ইমরান বললেন, ‘টিকিটের দাম বেশি নেয় নাই। শুধু সড়কে আর সদরঘাট এলাকায় যানজট ছাড়া এবার লঞ্চের পন্টুনে এসে অন্য কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় নাই।’
ফার্মগেট থেকে আসা ওমর ফারুক জানান, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এলাকায় আসার পথে রায়সাহেব বাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ও সদরঘাট মোড় এলাকায় যানজটের কারণে টার্মিনালে আসতে সমস্যা হয়েছে। ঈদ মৌসুমে যাত্রীদের চলাচলের স্বার্থে সড়কের যানজট নিরসনের দরকার বলে মনে করেন তিনি।
সদরঘাট টার্মিনাল নৌপুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘যাত্রীদের হয়রানিমুক্ত রাখা ও নিরাপত্তায় পুলিশ তৎপর আছে। বুড়িগঙ্গায় যাতে নৌকা থেকে কেউ লঞ্চে না উঠতে পারে, সে জন্য পুলিশ সজাগ আছে।’
কোতোয়ালি জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার বদরুল হাসান বলেন, গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার থেকে সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত যানজট নিরসনে ২৫০ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কাজ করছে।
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম আহ্বায়ক হামজা লাল বলেন, লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নির্দেশ রয়েছে, কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। এ ছাড়া সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার বেশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। এর ব্যতিক্রম ঘটলে অভিযুক্ত লঞ্চের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, লঞ্চে যাত্রী পূর্ণ হলেই লঞ্চ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অকারণে ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না। সকাল থেকে আমি পাটুরিয়া, মাওয়া ও সদরঘাট এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরছেন। তিনি আরও বলেন, বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট টার্মিনাল এলাকায় সড়কে হকার উচ্ছেদ ও যানজট নিরসনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ওয়াইজঘাট এলাকার ময়লা-আবর্জনার ট্যাংকারটি অপসারণের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটের যাত্রী বহনের জন্য ২০৯টি লঞ্চ চলাচল করছে।