শোলাকিয়া মাঠের নজরদারিতে ড্রোন

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে পুরো এলাকা। র‍্যাব, এপিবিএন, বিজিবি ও জেলা পুলিশের সহস্রাধিক সদস্য কাজ করবে নিরাপত্তায়। সহায়তা নেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তির।

জানা গেছে, ঈদের দিন মাঠের ভেতর-বাইরে সহস্রাধিক ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা থাকছে। পুরো মাঠে ওপর থেকে নজরদারি করবে দুটি ড্রোন। আটটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মুসল্লিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠ ও এর আশপাশে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি ও ২০০ এপিবিএন মোতায়েনসহ বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, মাঠের ভেতর-বাইরে পোশাক ও সাদাপোশাকে থাকা পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করবে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। শুধু পাতলা জায়নামাজ নিয়ে আসতে পারবেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। ঈদের দিন পর্যন্ত এলাকার কোনো বাসাতে নতুন কোনো ভাড়াটে না ওঠে, সে বিষয়ে বাড়িওয়ালাদের আহ্বান করা হয়েছে। নতুন কোনো মানুষ এলাকায় এলে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার জানান, ঈদের দিন মাঠের চারদিকের সব কটি প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়ে মাঠের দক্ষিণ দিকে তিনটি, পূর্ব দিকে তিনটি ও উত্তর পাশে একটি প্রবেশপথসহ মোট সাতটি প্রবেশপথ থাকবে। এর মধ্যে ছয়টি প্রবেশপথের আর্চওয়ে দিয়ে প্রত্যেক মুসল্লিকে ঢুকতে দেওয়া হবে। একটি পথ গাড়ি প্রবেশের জন্য রাখা হবে। এ ছাড়া মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
এবার শোলাকিয়ায় ১৯১তম ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। সকাল ১০টায় জামাত শুরু হবে। মুসল্লিদের আসা-যাওয়ার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতি ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশ থেকে তিন লাখের বেশি মুসল্লির সমাগম হয় এ মাঠে।
৮২৮ সালে এ মাঠে প্রথম বড় জামাতে একসঙ্গে সোয়া লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই সোয়া লাখ থেকে ঈদগাহ মাঠের নামকরণ হয় শোলাকিয়া।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন নামাজ শুরুর আগ মুহূর্তে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের তল্লাশির সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা করে। এ ছাড়া তাদের চাপাতির কোপে দুই পুলিশ কনস্টেবল মারা যান। এ সময় আরও ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে জঙ্গি আবির রহমান মারা যান। উভয় পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রানি ভৌমিক। আটক করা হয় জঙ্গি শফিউলকে। পরে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার ডাংরি এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে এক বন্দুকযুদ্ধে শফিউল নিহত হন। এ হামলার ঘটনার মামলা এখনো চলমান।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, মুসল্লিদের বাড়তি নিরাপত্তায় প্রশাসন থেকে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, ঐতিহ্যবাহী দেশের সর্ববৃহৎ এ মাঠে এবার প্রচুর মুসল্লির সমাগম হবে এবং নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরতে পারবেন মুসল্লিরা।