ফাঁকা শহরে ঈদের আমেজ

এক দিন আগেও শাহবাগের এ সড়ক ছিল যানবাহনে ঠাসা। ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাত্রা  শুরু হওয়ায় গাড়ির চাপ কমেছে। গতকাল দুপুরের দৃশ্য।  প্রথম আলো
এক দিন আগেও শাহবাগের এ সড়ক ছিল যানবাহনে ঠাসা। ঈদের ছুটিতে গ্রামে যাত্রা শুরু হওয়ায় গাড়ির চাপ কমেছে। গতকাল দুপুরের দৃশ্য। প্রথম আলো

ঈদের বাকি দুই কিংবা তিন দিন। কিন্তু ২৬ রমজান শেষ হতেই রাজধানীজুড়ে ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে। স্বজনের সঙ্গে আনন্দের মুহূর্তে কাটাতে গ্রামের পানে ছুটছেন মানুষ। বিপণিবিতান এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বাদে চিরচেনা সেই অসহনীয় যানজট অনেকটাই কমে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তা বেশ ফাঁকা।

জেসমিন রহমানের বাসা মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি আগারগাঁওয়ে। গতকাল বুধবার সেখানে গিয়ে মেয়েকে নিয়ে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে কেনাকাটা করতে যান। সব মিলিয়ে এই পথটুকু চলতে তাঁর এক ঘণ্টারও কিছু কম সময় লেগেছে। জেসমিন বলেন, অন্য সময় এই পথ যেতে দুই ঘণ্টার বেশি লেগে যেত। রমজান মাসে সেটা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তবে গতকাল ঢাকায় চলাচল ছিল তুলনামূলক স্বস্তির।

ঈদে স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীর বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ গ্রামে যায়। তাই ঈদের সময়টা ঢাকাকে যানজটের ধকল বা বেশি মানুষের চাপ থেকে কিছুটা নিস্তার মেলে।

ঘরমুখী কয়েকজন যাত্রী বলেন, আগামী শুক্রবার থেকে তিন দিনের ঈদের ছুটি শুরু। গতকাল ছিল পবিত্র শবে কদরের ছুটি। তাই মাঝে বৃহস্পতিবার এক দিন ছুটি নিয়ে অনেকে গ্রামের পানে ছুটছেন।

ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা কয়েকজন বলেন, মাঝের কয়েক দিনে যে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল, তা অনেকখানি কমে এসেছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে আগের চেয়ে কম সময় লাগছে। তবে বিকেলের দিকে প্রধান সড়কগুলোয় যানজট লেগে যায়।

আবার অনেক চাকরিজীবী ঢাকায় থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রামে চলে গেছেন। সরকারি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বৃহস্পতিবার অফিস শেষে রাতে চট্টগ্রামের বাসে চড়বেন। তবে তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তানকে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সপ্তাহখানেক আগে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘আমি বাড়ি পৌঁছাতে শুক্রবার হয়ে যাবে। আবার দুই দিন পরেই ফিরে আসতে হবে। তাই আগেভাগে পরিবারের সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছি। যাতে ওরা গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখতে পারে।’

রাজধানীর যে এলাকাগুলোয় সবচেয়ে বেশি যানজট থাকে, এর মধ্যে মিরপুর অন্যতম। শুধু কাজীপাড়া থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বর পার হতেই ঘণ্টাখানেক লেগে যেত। এই পথ এখন মিনিট দশের মধ্যেই পার হওয়া যায়।

আজিমপুর থেকে উত্তরা রুটে চলাচলকারী বাস মিরপুর লিংকের চালক মো. খলিলুল্লাহ বলেন, ‘রাস্তার জ্যাম (যানজট) পাতলা হতে শুরু করেছে। দিন দুই পরে রাস্তা আরও ফাঁকা হয়ে যাবে।’ তবে ঈদ চলাকালে গাড়ির সংখ্যাও কিছুটা কমে যাবে বলে জানান তিনি।

ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকায় যাঁরা থাকেন তাঁদের কাছে নগরের ঈদ ভিন্ন মাত্রা পায়। ধূলি-যানজটমুক্ত শহরে ঘুরে বেড়ানোতেই আনন্দ খুঁজে পান অনেকে। ঈদের আগের দিন থেকে ঢাকা একদম যানজটমুক্ত হয়ে যাবে বলে মনে করেন ধানমন্ডির বাসিন্দা শাওন চৌধুরী। সে সময় কীভাবে কাটাবেন, সে পরিকল্পনাও করে ফেলেছেন তিনি। শাওন বলেন, ‘সারা বছর যানজটের কারণে কর্মস্থল ছাড়া কোথাও যাওয়া হয় না। দুই ঈদেই কেবল শহরটা চলাচলের উপযোগী থাকে। তখন পরিবারের সবাই মিলে পুরো ঢাকা চষে বেড়াই। বাচ্চারাও ঘুরে খুব মজা পায়।’ শাওনের কথা শেষ না হতেই পাশ থেকে চার বছরের ছেলে বলে, ‘বাবা আমরা এবার অনেক বেড়াব, শিশুমেলায় যাব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিনথিয়া আহমেদ বলেন, ‘শহরে ঈদ মানে ফাঁকা ঢাকায় টইটই করে ঘুরে বেড়ানো। এটাই আমার ঈদের আনন্দ।’