মুক্ত আজহারের এবার অন্য রকম ঈদ

মো. আজহার
মো. আজহার

মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা দিনাজপুরের মো. আজহারের জীবনে এবারের ঈদ ঠিক অন্যদের মতো নয়। তাঁর মা মনছুরা বেওয়ার (৭৫) কাছেও এই ঈদের খুশি অন্য যে কারও চেয়ে একটু বেশিই। খুনের মামলায় টানা প্রায় ২০ বছর জেলে ছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের উত্তর জয়দেবপুর গ্রামের আজহার। ২০ বছর পর একসঙ্গে ঈদ করবেন মা-ছেলে।

জেলে যাওয়ার সময় আজহারের বয়স ছিল ২৫ বছর। ১৯৯৮ সালে শ্বশুর আবদুল জব্বারকে খুন করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। বিচারিক আদালত ২০০৫ সালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১০ সালে হাইকোর্ট এবং ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগও তাঁকে বেকসুর খালাস দেন। তবু মুক্তির পথ খোলেনি তাঁর। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের ১২ মে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির উদ্যোগে একটি মতবিনিময় সভায় আজহারের মামলার অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এরপরই আইনি জট খুলতে শুরু করে। অবশেষে ২৩ মে দিনাজপুর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

গত মঙ্গলবার আজহারের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা মনছুরা বেওয়ার সঙ্গে। ছেলেকে ফিরে পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর মনে হয়েছে, তিনি যেন আবার আজহারকে জন্ম দিয়েছেন।

আজহাররা পাঁচ ভাই ও দুই বোন। তাঁর মা থাকেন ছোট ছেলে বাদশাহর কাছে। বাদশাহ নির্মাণশ্রমিক সরবরাহের কাজ করেন। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আজহার এখন নির্মাণশ্রমিকের কাজ করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার থেকে মুক্তির পর তাঁর মনে হচ্ছে নতুন পৃথিবীতে এসেছেন।

দুঃখ করে আজহার বলেন, তাঁর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর স্ত্রী আবার বিয়ে করেন। কারাগারে যাওয়ার সময় মেয়ে আজমিরার বয়স ছিল দুই বছর। বিয়ের পর মেয়ে থাকছেন স্বামীর বাড়িতে, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায়। মুক্তি পাওয়ার দিন তাঁকে এসে দেখে গেছেন। নতুন করে জীবন সাজানোর চেষ্টা করছেন জানিয়ে আজহার বলেন, ঈদের দিন মেয়ের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা আছে তাঁর।

গত ২১ মে ‘অবশেষে মুক্তির পথ খুলছে আজহারের’ এবং ২৪ মে ‘খালাস পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি আজহারের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয়।