নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি ঠিক করতে হবে দলগুলোকেই

বাংলাদেশের সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি রাজনৈতিক দলগুলোকেই নির্ধারণের জন্য তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ। এ জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ হওয়াটা জরুরি।

গতকাল রোববার পৃথক বৈঠকে এ অভিমত দিয়েছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। বাংলাদেশ সফরের তৃতীয় দিনে তিনি এদিন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও গওহর রিজভী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। এ ছাড়া সকালে তিনি ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আলব্রেখট কনজের বাসায় প্রাতরাশ সভায় যোগ দেন।

বাংলাদেশের নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো গত শুক্রবার চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দলের তিন সদস্যের এক প্রতিনিধিদল রাজধানীর একটি হোটেলে অস্কার ফার্নান্দেজের সঙ্গে বৈঠক করে।

বৈঠক শেষে আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪৫ মিনিটের বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংলাপ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইত্যাদি প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, সংলাপ আয়োজনের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করাটা জরুরি। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু ছাড়া কোনো আলোচনা বা সংলাপ হতে পারে না বলেও আমরা উল্লেখ করেছি।’

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত চললেও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা তাঁর কাছে আশাবাদ প্রকাশ করেছি। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনকে উদ্ধৃত করে তারানকো বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে জাতিসংঘের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।’

স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক: বিকেলে জাতীয় সংসদে স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সংলাপের ওপর জোর দিয়েছেন অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো।

সাক্ষাতের পর স্পিকার সাংবাদিকদের বলেন, আগামী নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা যায়, তা নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতিনিধি অস্কার ফার্নান্দেজ সবার সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছেন। তিনি মহাসচিব বান কি মুনের বার্তা নিয়ে এসেছেন, সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

শিরীন শারমিন বলেন, ‘জাতিসংঘ বিদ্যমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে সংলাপকে উৎসাহিত করছে। তাঁরা মনে করেন, সংঘাতের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, সমাধানের জন্য আলোচনায় বসতে হবে। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, আলোচনা সংসদে হলে সেখানে স্পিকারের ভূমিকা কী হবে। আমি বলেছি, স্পিকার হিসেবে আমি সব ধরনের সহযোগিতা করব।’

শিরীন শারমিন বলেন, সংলাপের ব্যাপারে দুই দলেরই মনোভাব ইতিবাচক। আলোচনা শুরু হলে সমস্যার জট খুলে যাবে।

আলোচনা কোথায় হলে ভালো হয়, সেটা নিয়ে জাতিসংঘের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে স্পিকার জানান। তিনি বলেন, আলোচনা কোথায় হবে, সে বিষয়ে দুই দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে আলোচনা সংসদে হওয়াই ভালো। সংসদে আলোচনা হলে কারোর প্রতি বৈষম্য করার সুযোগ থাকবে না। এখানে সবারই সমান অধিকার রয়েছে।

স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা শেষে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো সাংবাদিকদের কাছে কিছু বলতে রাজি হননি।

সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ: স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিকেলে অস্কার ফার্নান্দেজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের পর সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘ প্রতিনিধির সঙ্গে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশনের প্রস্তুতিতে জাতিসংঘ প্রতিনিধি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ এবং তাতে প্রধান বিরোধী দলের অংশ না নেওয়ার বিষয়ে অস্কার ফার্নান্দেজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে কাজী রকিব জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিরোধী দল আসলে আমরা তাদের সঙ্গেও বসব।’ তবে জাতিসংঘ প্রতিনিধির সঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে সিইসি জানান। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের আমলে অনেক নির্বাচন হয়েছে এবং সুষ্ঠুই হয়েছে। সে বিষয়টি জাতিসংঘ প্রতিনিধির কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

সাক্ষাতে সিইসির সঙ্গে কমিশন সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ সাদিক উপস্থিত ছিলেন।