জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে আজ বুধবার মাদকবিরোধী অভিযানে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। ছবি: জাহিদুল করিম
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে আজ বুধবার মাদকবিরোধী অভিযানে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। ছবি: জাহিদুল করিম

আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। প্রায় তিন ঘণ্টার এ অভিযানে পুলিশ ক্যাম্প থেকে ৫১ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে নিয়ে যায়। 

আজ এ ক্যাম্পে অভিযানের সময় পুরুষের চেয়ে ক্যাম্পে নারীদেরই বেশি দেখা যায়। গলি ও ঘরের সামনে নারীরা বসে আছেন। সবার অভিযোগ, নির্দোষ ব্যক্তিদের ধরা হচ্ছে। মাদকের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তারা আগেই পালিয়েছে।

হাতে একটি বিয়ের দাওয়াত কার্ড নিয়ে ঘুরছেন মুন্নি। তাঁর ভাই রাজুকে ধরে নিয়েছে পুলিশ। মুন্নি একে-ওকে ধরে বলছেন ভাইকে ছেড়ে দিতে। আগামী সোমবার তাঁর বিয়ে। মুন্নি বলেন, ‘ভাই সেলুনে কাজ করে। কয়দিন পর বিয়ে। আমার ভাইটারে বিনা দোষে নিয়ে গেল।’

ক্যাম্পের ভেতরে ঢোকার মুখে পুলিশ সদস্যরা ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছেন। কাউকে ঢুকতে বা বেরোতে দিচ্ছে না। সেখানে একদল নারী এসে তাঁদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে নিরপরাধ ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

মুন্নি তাঁর ভাইয়ের বিয়ের কার্ড নিয়ে ঘুরছেন। মাদকবিরোধী অভিযানে তাঁর ভাই রাজুকে পুলিশ ধরে নেয়। ছবি: সুহাদা আফরিন
মুন্নি তাঁর ভাইয়ের বিয়ের কার্ড নিয়ে ঘুরছেন। মাদকবিরোধী অভিযানে তাঁর ভাই রাজুকে পুলিশ ধরে নেয়। ছবি: সুহাদা আফরিন

আজমেরি নামের একজন চিৎকার করে বলছিলেন, ‘যাগোর টাকা খায় তাগোরে তো ধরে না। আমার ছেলেটা ছোট। ধইরা নিল।’ ধরে নিয়ে যাওয়া আরেকজনের স্বজন বলছেন, তাঁর ভাইয়ের হাতে কাটা দাগ দেখে পুলিশ সন্দেহ করে ধরে নেয়। পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াতে গেলে তাঁদের বলা হয়, অভিযান শেষে থানায় গিয়ে যোগাযোগ করতে। যাচাই-বাছাই করে ছেড়ে দেওয়া হবে।
অভিযান চলাকালে, পুলিশ বিভিন্ন বাসায় গিয়ে একেকজনের নাম জিজ্ঞাসা করে সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে নেয়। কয়েকটি বাসায় তালা ভেঙে ঢুকে তল্লাশি চালায়। এর মধ্যে ‘চুয়া সেলিম’ নামের একজনের বাসা খোঁজে পুলিশ। তাঁর বাসা সন্দেহেও একটি বাসার তালা ভেঙে তল্লাশি চালানো হয়। ওই বাসার নিচের তলার বাসিন্দা অবশ্য বলেন, ‘চুয়া সেলিম’ নামের কেউ ওখানে থাকে না। তল্লাশি শেষে এক পুলিশ সদস্য জানান, ভেতরে কাপড়চোপড় ও আসবাব ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি।
অভিযান শেষে মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ওয়াহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবেই আজকের এ অভিযান। পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের ৩০০ সদস্য এ অভিযানে অংশ নেন। ইয়াবা পাওয়া গেছে ৭০০। সন্দেহভাজন হিসেবে ৫১ জনকে থানায় নিয়েছি। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা বাসা তালাবদ্ধ করে পালিয়েছেন। যাঁরা পালিয়েছেন, তাঁরা যেন চিরতরে পালিয়েই থাকেন। ক্যাম্পে যাতে তাঁরা ফেরত না আসেন, পুলিশ সেই ব্যবস্থা নেবে। তাঁদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অভিযানে বিভিন্ন বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। ছবি: জাহিদুল করিম
অভিযানে বিভিন্ন বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। ছবি: জাহিদুল করিম

দিনের বেলা অভিযান চালানোর ব্যাপারে এই উপকমিশনার বলেন, এ জায়গাটি স্পর্শকাতর। পাশে গণভবন রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে তাঁরা অভিযান চালান।
অভিযানের আগেই পুলিশের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীরা খবর পেয়ে পালিয়ে যায় কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযানের ব্যাপারে তাঁরা জেনেছেন সকালে। এ ছাড়া আদাবর ও মোহাম্মদপুর থানাকে জানানো হয়েছে ঘেরাও করার পরে। আগে খবর পাওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।