নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশে ঘর ছাড়ে নরসিংদীর তিন শিশু

দুঃসাহসী অভিযাত্রার উদ্দেশে ঘর ছেড়েছিল নরসিংদীর তিন শিশু-কিশোর। ওদের ইচ্ছে ছিল দুর্গম কোনো দ্বীপে গিয়ে টিকে থাকার লড়াই চালানো। এ জন্য কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছাড়ে তারা। উদ্দেশ্য ভোলার নিঝুম দ্বীপ। কিন্তু ভুল করে উঠে পড়ে বরগুনার আমতলী উপজেলাগামী লঞ্চে। সেখানে এসে দুজন ক্লান্ত হয়ে পড়ে শুরু করে কান্নাকাটি। লোকজনের সন্দেহ হয় তাদের দেখে। এরপর স্থানীয় লোকজন তাদের নিয়ে আসেন আমতলী থানায়। তারা তিনজনই নরসিংদী সদর উপজেলায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিন শিশু-কিশোরকে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তারা বাড়ি ফিরেছে।

এই তিনজনের একজন জানায়, ডিসকভারি টিভি চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠান দেখে সে দ্বীপবাসী হওয়ার কথা ভাবে। অনেক দিন ধরে মানচিত্র দেখে দেখে সে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার কথা মনস্থির করে। পরিবারের কাউকে কিছু জানিয়ে অন্য দুজনকে নিয়ে সে রওনা হয়েছিল নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশে। তার ইচ্ছা ছিল সে একাই ২০২১ সাল অবধি নিঝুম দ্বীপে অবস্থান করবে। আর সেখানে পৌঁছার পর অন্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দেবে।

একজনের বাবা জানান, ১৮ জুন সকালে তাঁর ছেলে স্কুলব্যাগে জামাকাপড় গোছাচ্ছিল। মনে হয়েছিল, হয়তো এমনিতেই একা একা খেলছে। কিন্তু দুপুরের দিকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর জানা গেল অন্য দুই কিশোরও বাড়িতে নেই। তাদের খুঁজে না পেয়ে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ওই অভিভাবক বলেন, তাদের একজনের কাছে বাংলাদেশের একটি মানচিত্র ছিল। তিনজনই স্কুলব্যাগে জামাকাপড় নিয়েছিল। এরপর বাসে উঠে চলে যায় নারায়ণগঞ্জ। সেখানে এসে ফতুল্লা লঞ্চঘাটে গিয়ে ভোলার লঞ্চ ধরতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু ভুলে আমতলীগামী লঞ্চে উঠে পড়ে। পরদিন তারা আমতলীতে নামার পর সেখান থেকে হেঁটে কিছুদূর যায়। এতে দুজন বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পরে তাদের একজন কান্নাকাটি শুরু করে ও বাড়ি ফিরে যেতে চায়। এরপর তিনজন পুনরায় আমতলী লঞ্চঘাটে ফিরে আসে। ঘাটে এসে দেখে কোনো লঞ্চ নেই। এ সময় তাদের একজনের কান্নাকাটি আরও বেড়ে যায়। এ সময় লোকজন জড়ো হয়ে কান্নাকাটির কারণ জানতে চাইলে তারা সব খুলে বলে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের তিনজনকে আমতলী থানায় নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার আমতলী থানা থেকে নরসিংদী সদর থানায় জানানো হলে মঙ্গলবার গভীর রাতে তাঁরা আমতলী পৌঁছান। বুধবার বিকেলে আমতলী থানা থেকে তিনজনকে নরসিংদী ফেরানো হয়।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, থানায় আনার পর ওদের তিনজনকে খাওয়াদাওয়া করানো হয়। বাড়ি ছাড়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে শুরুতে অস্বীকার করছিল। পরে স্বীকার করে বলে, ডিসকভারি টিভি চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠান দেখে ওরা দুর্গম দ্বীপে গিয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত থাকতে চেয়েছিল।

ওসি মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার চাকরি জীবনে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। অভিভাবকদের উচিত শিশুরা চ্যানেলগুলোতে কী দেখছে, কী শিখছে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা এবং শিশুদের ব্যাপারে আরও যত্নশীল হওয়া।’