আ. লীগে কোন্দল, প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা বিএনপির

আহসান হাবিব ও সাদিক আবদুল্লাহ
আহসান হাবিব ও সাদিক আবদুল্লাহ

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৩০ জুলাই। বড় দুটি দল থেকে মেয়র পদে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। সরকারের শেষ সময়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে মরিয়া আওয়ামী লীগ। পিছিয়ে নেই বিএনপিও। আগেরবারের মতো দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। এ জন্য উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীর সন্ধান করছেন।

তবে বড় দুই দলের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে এখানে ভিন্নমাত্রার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ প্রার্থিতা নিয়ে দলীয় কোন্দল। আর বিএনপির সমস্যা গত নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র আহসান হাবিবের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতা।

নগরবাসী বলছেন, প্রয়াত সাবেক মেয়র শওকত হোসেন তাঁর পাঁচ বছর মেয়াদে নগরের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। তারপরও ২০১৫ সালের ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিবের কাছে তিনি হেরে যান। শওকত হোসেনের পরাজয়ের পেছনে দলীয় কোন্দলকে দায়ী করা হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মাহমুদুল হক খান।

২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির আহসান হাবিব ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন পান ৬৬ হাজার ৭৪১ ভোট। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক পেয়েছিলেন ১ হাজার ৮০৭।

অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারও সে রকম আলামত দেখছেন নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। তাঁরা বলেন, এবার মূলত দুজন প্রার্থীর নাম সর্বাধিক আলোচনায় আছে। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। সাদিক আবদুল্লাহ সাবেক চিফ হুইপ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর জ্যেষ্ঠ ছেলে। কিন্তু এর বাইরেও একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক আলতাফ হোসেন ও মাহমুদুল হক খান।

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সাদিক আবদুল্লাহকে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ইতিমধ্যে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তবে ওই সভায় জাহিদ ফারুক যোগ দেননি। তিনি গত সোমবার দলের ধানমন্ডির কার্যালয়ে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন।

জাহিদ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে মনোনয়ন পেয়ে ১ লাখের কাছাকাছি ভোট পান। ২০১৪ সালে তাঁকে আর মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাঁকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। এভাবে একের পর এক বঞ্চিত করা হয়েছে তাঁকে। 

ব্যর্থতার দায় বিএনপির

গত পাঁচ বছরে বর্তমান মেয়র আহসান হাবিবের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থতার দায় নিয়েই বিএনপিকে এবার নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। এ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যেও যেমন নানা ক্ষোভ আছে, তেমনি ক্ষোভ দলের মধ্যেও আছে। বিএনপি কীভাবে সেটা মোকাবিলা করবে, এটাই এখন বড় প্রশ্ন। যদিও দিলটির নেতা-কর্মীরা মনে করেন, বরিশাল নগর হচ্ছে বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি। এখানে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি জয়ী হবে।

নগরবাসী জানান, গেল পাঁচ বছরে মেয়র আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা বরখাস্তের খড়্গ ছিল না। নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপরও নগরবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির অনেকটাই রাখতে পারেননি তিনি।

নগরবাসীর অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে নাগরিক সুবিধা বাড়েনি, রাস্তাঘাট তেমন ভালো হয়নি, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, ফুটপাত দখলমুক্ত হয়নি। নগরের বর্ধিত অংশের অবস্থা এখনো নাজুক। তবে মেয়রের দাবি, তিনি বিএনপির নেতা বলে সরকারের তেমন সহযোগিতা পাননি। সব সময় চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। মেয়রের দাবি, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক অনেক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ না থাকলেও নগরের বিধ্বস্ত সব রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন তিনি করেছেন।

এখানে বিএনপির মূলত তিনজন প্রার্থী আলোচনায় আছেন। তাঁরা হলেন বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ওবায়দুল হক। প্রকাশ্যে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও নগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান প্রার্থী হতে পারেন।