৫৮ কেন্দ্র নিয়ে রিজভীর 'সুনির্দিষ্ট' অভিযোগ

রুহুল কবির রিজভী। প্রথম আলো ফাইল ছবি
রুহুল কবির রিজভী। প্রথম আলো ফাইল ছবি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৮টি কেন্দ্র নিয়ে ‘সুনির্দিষ্ট’ অভিযোগ করলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ ছাড়া আরও কিছু কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব অভিযোগ করেন।

নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুখবর নেই উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দল থেকে সরেজমিনে যাঁরা নির্বাচন মনিটরিং করছেন, তাঁদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি, এখন পর্যন্ত (বেলা ১১টা ৪৩ মিনিট) শতাধিক কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জালভোট, সিল মারার মহোৎসব চলছে।’

নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটা ভাঙা হাঁড়ি। হাঁড়ি যেমন ভাঙলে জোড়া লাগানো যায় না, তেমনি আমরা যতই তাদের কাছে অভিযোগ করি, বলি যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন, কিন্তু এই ভাঙা হাঁড়ি জোড়া লাগানো যায় না। তারা ভালো কাজ করতে চায় না।’

সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘কেড়ে নাও, দখল করো, সন্ত্রাস করো—এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের চরিত্র এবং ঐতিহ্য। এর বাইরে আওয়ামী লীগ যেতে পারেনি, যাবে না।’

রিজভীর যত অভিযোগ

রিজভীর অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের বাড়ির সামনে নোয়াগাঁও এম এ মজিদ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রসহ অনেক কেন্দ্রে এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হার্বাট মডেল একাডেমি কেন্দ্র, জসিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র, পানিসাইল গিয়াসউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র, ২ নম্বর ওয়ার্ড লোহা আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, নোয়াকুর মাজার কেন্দ্র, কফিলউদ্দিন পাবলিক স্কুল কেন্দ্র, সিনকাপ প্রিক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুল কেন্দ্র, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বারিন্দা কেন্দ্রের এজেন্ট এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৬ জন এজেন্টকে পুলিশ বের করে দিয়েছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাগবাড়ী কেন্দ্র, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জরুন মাদ্রাসা কেন্দ্রের ধানের শীষের সব এজেন্ট বের করে দিয়ে পুলিশ নিজেরাই নৌকা প্রতীকে সিল মারছে।

কোনাবাড়ী কলেজ কেন্দ্র, আমবাগের চারটি কেন্দ্র, জোড়ন এলাকার ছয়টি কেন্দ্র, পারিজাত এলাকায় ছয়টি কেন্দ্র দখল করে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নিজেরা নৌকা প্রতীকে সিল মারছে।

কাশিমপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ধানের শীষের এজেন্ট আজিজ মাস্টারকে কেন্দ্র থেকে বের করে পুলিশভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাগবাড়ী মাদ্রাসা কেন্দ্রের এজেন্ট মাহবুব মেম্বারসহ সব এজেন্টকে একটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে নৌকা প্রতীকে সিল মারছে।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোনাবাড়ী কলেজ কেন্দ্রের ধানের শীষের সব এজেন্ট বের করে দিয়েছে। ওই কেন্দ্রের ভোটারদের কাউন্সিলদের ব্যালট দেওয়া হয় এবং মেয়রের ব্যালটে তারা নিজেরাই সিল মারে।

মুন্নু টেক্সটাইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের বিশাল লাইন অথচ কেন্দ্রের ভেতরে ফাঁকা।

১১ নম্বর ওয়ার্ড খোলাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাসন তাইজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের এম এ রাজ্জাক মাস্টার দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের অধিকাংশ এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ড জোগীতলা বদরে আলম আরাবিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউলতিয়া জহির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে, ৩০ নম্বর কানাইয়া ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

৩১ নম্বর ওয়ার্ড ধীরাশ্রম জি কে আদর্শ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড শরিফপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কলমেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রোকেয়া সরণি কেন্দ্র, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কুনিয়া হাজী আব্দুল লতিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও আয়াত আলী উদয়ন একাডেমি, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কামারজুড়ি ইউসুফ আলী উচ্চবিদ্যালয় ও গাছা উচ্চবিদ্যালয়ের সব এজেন্ট, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ইসয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের বলা হচ্ছে, আপনাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।

৪১ নম্বর ওয়ার্ড পুবাইল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র, নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড রোহান বিন্দ্যায়িত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের নওয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র, শাহজুদ্দিন সরকারি বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্রের সব এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

৪৮ নম্বর ওয়ার্ড ধূমকেতু উচ্চবিদ্যালয়, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড আঞ্জুমান হেদায়েতুল উম্মত এতিমখানা, ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের সাতাই উচ্চবিদ্যালয় ও সাতাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র থেকে সকল এজেন্ট বের করে দিয়ে সিল নৌকা প্রতীকে সিল মারা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।