সংসদে ড. ইউনূস-দেবপ্রিয়-ড. কামালের সমালোচনা

প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করায় জাতীয় সংসদে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সমালোচনা করেছেন সরকারি দলের সদস্যরা। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমালোচনা করে তাঁদের ‘মতলববাজ’ বলেও আখ্যা দেন সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ সেলিম এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও সুশীল সমাজের সমালোচনা করেন।

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করেন শেখ সেলিম।

বাজেটের সমালোচনা করায় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও মির্জ্জা আজিজের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, ‘এদের কথা শুনে আমাদের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে? এরা হলো মতলববাজ, সুবিধাভোগী এবং এ দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

শেখ সেলিম বলেন, ‘বাজেট হতে পারল না, টেলিভিশনের পর্দা ফাটিয়ে দিল। কে? ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। উনি কে? উনি হচ্ছেন ওয়ান-ইলেভেনের মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। উনি দুটি বাজেট দিয়েছেন। কোথায় দিয়েছেন? ক্যান্টনমেন্টে বসে। সংসদকে সেদিন কারাগার, আদালত বানিয়েছিল। তার কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কে শিক্ষা নিতে হবে?’

শেখ সেলিম বলেন, ‘আরেকজন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। উনি প্রতিদিন আমাদের ছবক দেন।’

ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের পরামর্শদাতা ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন তিনি বলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বৈধ না।


ড. ইউনূসের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু যেখানে অশান্তি, সেখানে তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে তিনি জড়িত।

শেখ সেলিম বলেন, শান্তিতে নোবেল পেতে হলে পার্বত্য চুক্তি ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেতে পারেন।

বাজেটের সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও। তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে একটি পত্রিকায় সুশীল সমাজের আলোচনার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ঢালাও মন্তব্য। সুনির্দিষ্ট কিছু নেই। কোনটা জনস্বার্থের বিরুদ্ধে, তা নেই। এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য। নিন্দুক অনেক আছেন সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু মনে হচ্ছে, এটা এখন হিংসার পর্যায়ে চলে গেছে।

অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা
শেখ সেলিম বলেন, ‘ব্যাংক খাতে কিছু অনিয়ম আছে, গুরুত্ব বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন; যা তাদের মূলধনের ছয় গুণের বেশি। এটা হতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কী করে জানি না। আপনার কাছে কী প্রতিবেদন আছে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমি জানি না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য, আদায় করার জন্য এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আপনি নিয়েছেন কি না, আমার জানা নেই।’

শেখ সেলিম বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩২ শতাংশ। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যাংক খাত ভেঙে পড়লে সব প্রকল্প ভেস্তে যাবে।

আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে শেখ সেলিম বলেন, ‘সবার জন্য আইন সমান। কিন্তু আপনি কিছু বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কোম্পানিকে যে সুযোগ দিচ্ছেন, তা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। ৫০০ কোটি টাকার ওপর যারা ঋণ নিয়েছে, ১১টি গ্রুপ কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা—এটা কেন দিলেন জানি না। এ টাকা জনগণের টাকা। আপনি শুধু সেটা রক্ষা করবেন। আপনি আইন ভঙ্গ করে তাদের এ সুযোগ দিতে পারেন না।’

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, সাধারণ মানুষের কর ৩৩ শতাংশ। আর ৫ শতাংশ বড়লোকের কর ৩০ শতাংশ। সরকার ৫ শতাংশ লোককে টার্গেট করেছে। যেভাবে হোক সরকার ওই ৫ শতাংশ লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচনে নামবে।

অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, মাহবুব উল আলম হানিফ, মোস্তাফিজুর রহমান, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।